আগস্ট ৫, ২০২৪। এই তারিখটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনেই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
ঢাকা: বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের ক্ষমতা পরিবর্তনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তন গণতান্ত্রিক ছিল না, বরং এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত এবং বিদেশ-দ্বারা অনুপ্রাণিত অভ্যুত্থান, যা দেশকে অস্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং বাহ্যিক হস্তক্ষেপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এই এক বছরে এমন পাঁচটি বড় মিথ ভেঙে গেছে, যা এই অভ্যুত্থানের বাস্তবতা উন্মোচন করেছে।
১. গণআন্দোলন নয়, চরমপন্থী ষড়যন্ত্র ছিল ক্ষমতা পরিবর্তনের ভিত্তি
গত বছর যখন শেখ হাসিনার সরকারকে সরানো হয়েছিল, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এটিকে একটি ছাত্র আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু খুব শীঘ্রই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে এর পেছনে জামায়াত-ই-ইসলামীর মতো চরমপন্থী সংগঠন ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া জামায়াত আবারও পাকিস্তানি এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। এবার সে চীন ও কিছু পশ্চিমা শক্তির সমর্থন পেয়েছে, এবং মুহাম্মদ ইউনূস এই জোটের মুখোশ হিসেবে সামনে এসেছেন।
২. সাংবিধানিক শাসন নয়, মৌলবাদীদের দখল
মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নামে যে ক্ষমতা দখল করেছে, তার বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো উল্লেখ নেই। হিজবুত তাহরীর ও হেফাজত-ই-ইসলামের মতো উগ্রবাদী সংগঠনগুলোকে ক্ষমতায় বসিয়ে ইউনূস স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তার সরকার গণতান্ত্রিক নয়, বরং শরিয়াভিত্তিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এতে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে।
৩. গণতান্ত্রিক উত্তরণ নয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা, কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো নির্বাচন হয়নি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। ইউনূস বারবার নির্বাচন পেছানোর কৌশল নিয়েছেন। এই সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের ছায়ায় নতুন দল ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) গঠিত হয়েছে, এবং ইউনূস তার রাজনৈতিক মুখ।
৪. সহিংসতার অবসান নয়, সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনা, কিন্তু এর বিপরীতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অনেক বেড়েছে। হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আহমদীয়া ও সুফি মুসলমানদের নিশানা করা হয়েছে।
- মন্দির ও গীর্জা জ্বালানো হয়েছে
- আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা বা গ্রেফতার
- গণমাধ্যমকে চুপ করানোর অভিযান
৫. স্বাধীন নীতি নয়, পাকিস্তান-চীনের চাপে বাংলাদেশ
আজকের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে না। ইউনূসের নীতি সরাসরি পাকিস্তান ও চীনের স্বার্থ পূরণ করছে।
- আইএসআই এজেন্টদের উপস্থিতি বেড়েছে
- চীনা কোম্পানিগুলোকে বিনা প্রক্রিয়াতে ঠিকা দেওয়া হচ্ছে
- ভারত বিরোধী সংগঠনগুলোকে সমর্থন
এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে – মূল্যস্ফীতি চরম পর্যায়ে, এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
ভারতের জন্য সতর্কবার্তা
ভারত গত এক বছর ধরে ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে এই পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। আশা করা হয়েছিল যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শীঘ্রই পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু এখন যখন ইউনূস সরকার ভারতীয় স্বার্থে আঘাত হানতে কোনো কসুর করছে না, এবং পাকিস্তান-চীনের জোট প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তখন প্রশ্ন উঠছে – ভারত আর কতদিন ধৈর্য ধরবে?
ভারতের কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা। এটি এখন শুধু প্রতিবেশী দেশের সংকট নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।