বাদুড়িয়া জলাবদ্ধতা সংকটভেলায় রোগী স্যালাইন হাতে পরিজনেরা!

বাদুড়িয়া জলাবদ্ধতা সংকটভেলায় রোগী স্যালাইন হাতে পরিজনেরা!

 আধুনিকতার মধ্যেও কলার ভেলায় ভরসা!

বছর ২০২৫—যেখানে একদিকে রকেট উড়ছে চাঁদে, অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়া ব্লকের সলুয়া গ্রামে কলার ভেলাই একমাত্র ভরসা অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনোর! চাতরা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই চিত্র যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কতটা বেহাল।

কোমরজলে হাঁটছে গ্রাম, তালিকায় একাধিক জনপদ

পাপিলা, কোটালবেড়িয়া, রসুই, পোতাপাড়া, মির্জাপুর—এই সব গ্রাম যেন পরিণত হয়েছে জলরাজ্যে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান জল। শুধু ঘর নয়, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, এমনকি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ডুবে একাকার। সাধারণ মানুষের কাছে জলই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।

চাষের জমি ডুবে, কাজ হারিয়ে ঘরে বসা মানুষ

জমিতে ধান লাগানোর মরসুম, অথচ জল জমে আছে। কাজ নেই, আয় নেই। দিনমজুর, কৃষক—সবাই কার্যত কর্মহীন। কাদামাখা জলে গরু টানছে গাড়ি, মাথায় করে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ফিরছেন গৃহিণীরা। এই দৃশ্য যেন ফিরে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক দশক পিছনে।

পড়ুয়ারা স্কুলবিমুখ, কাঁধে করে জল পেরিয়ে যাত্রা

জলের তোয়াক্কা না করে অনেক বাবা-মা সন্তানদের কাঁধে তুলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও জল পেরিয়ে পাচ্ছেন ভ্যান, কোথাও হাঁটা ছাড়া গতি নেই। স্কুলে উপস্থিতির হার ক্রমেই নিম্নমুখী। এমন দিনে শিক্ষা তো দুরাশা মাত্র।

হাসপাতালে যাওয়া এখন রীতিমতো অভিযান

সালুয়া গ্রামে স্যালাইন হাতে রোগীর আত্মীয়, আর রোগী শুয়ে আছেন কলার ভেলায়! ওই ভাবেই পেরিয়ে যেতে হচ্ছে জলে ভরা রাস্তা। রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে এগোতে হচ্ছে। এই ছবি আবারও সামনে এনে দিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগোছালো চেহারা।

আগেও ঘটেছে এমন, স্থায়ী সমাধান কোথায়?

এর আগে হিঙ্গলগঞ্জের গোবিন্দকাটি এলাকায় ডুলিতে করে রোগীকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। প্রশাসন তৎপর হলেও বছর ঘুরতেই ছবি একই থেকে যায়। অস্থায়ী বাঁধ বা পাম্প নয়, এবার চাই স্থায়ী জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা।

প্রশাসনের নিরুত্তর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বারবার জানিয়েও সঠিক জলনিষ্কাশনের কোনও উদ্যোগ নেই। পঞ্চায়েত স্তরে যেটুকু হচ্ছে, তা অপ্রতুল। বর্ষা নামলেই একই ছবি—শুধু ক্যামেরা বদলায়, দুর্দশা নয়। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজর কোথায়?

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে দুর্দশার ভিডিও

একাধিক ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল—যেখানে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে রোগীকে ভেলায় চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই ছবি দেখে সহানুভূতি তো জন্মাচ্ছে বটে, তবে সমাধানের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কেবলই আলোচনার ঝড় উঠছে।

এখনই ব্যবস্থা না নিলে বাড়বে সংকট

জল না নামলে বাড়বে পানীয় জলের অভাব, দেখা দেবে রোগবালাই। ইতিমধ্যে শিশুরা সর্দি-জ্বরে কাবু। বন্যা নয়, অতি বর্ষায় জল জমে তৈরি হয়েছে এই বিপর্যয়। এখনই স্থায়ী সমাধান না করলে আগামী বর্ষায় আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা দেবে।

উন্নয়নের দাবিতে, বাস্তবের চোখরাঙানি!

নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি যেমন তুঙ্গে থাকে, জলমগ্ন গ্রামগুলোর স্মৃতি তত দ্রুতই মুছে যায়। কিন্তু ২০২৫ সালের বাংলায় দাঁড়িয়েও কলার ভেলায় হাসপাতালে যেতে হচ্ছে—এটাই আমাদের চরম ব্যর্থতার দলিল!

Leave a comment