শুধু ফল নয়, কলার পাতায়-খোসাতেও লুকিয়ে অজানা গুণ

শুধু ফল নয়, কলার পাতায়-খোসাতেও লুকিয়ে অজানা গুণ

কলার নাম শুনলেই সবার মনে ভেসে ওঠে এক সুলভ অথচ পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলের ছবি। কিন্তু জানেন কি, শুধু ফল নয়, এর পাতা ও খোসাতেও রয়েছে অসংখ্য আশ্চর্য উপকারিতা? পুষ্টি-বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের জীবনে কলার খোসা ও পাতা ফেলে না দিয়ে ব্যবহার করলে শরীর থেকে পরিবেশ—সবই উপকৃত হয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার কলার খোসা

খোসা সাধারণত আমরা অবহেলা করে ডাস্টবিনে ফেলি। অথচ গবেষণা বলছে, কলার খোসায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলি শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকারক অণুগুলিকে নিরপেক্ষ করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিনের ডায়েটে কলার খোসার ব্যবহার কার্যকর হতে পারে।

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে

কলার খোসা ও পাতায় প্রাকৃতিক প্রদাহ-বিরোধী যৌগ থাকে। পলিফেনল ও ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান প্রদাহ হ্রাস করে, যা আর্থ্রাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাজনিত সমস্যায় কার্যকর হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত ব্যবহারে এটি শরীরের ভিতরের প্রদাহজনিত ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে।

ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ

ব্রণ, ফুসকুড়ি কিংবা রোদে পোড়া দাগ—সবকিছুর জন্য কার্যকর হতে পারে কলার খোসা। এতে উপস্থিত ভিটামিন বি৬, বি১২, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, খোসা ঘষে নিলে ব্রণের দাগ কমে যায়, আবার ত্বক হয়ে ওঠে টানটান ও উজ্জ্বল। প্রসাধনীর চেয়ে একে বলা চলে প্রকৃতির আশীর্বাদ।

হজমশক্তি উন্নত করে

শুধু ত্বক নয়, পেটের স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী কলার খোসা। এতে পাওয়া যায় খাদ্যতালিকাগত আঁশ, যা অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য কলার খোসা প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করতে পারে। নিয়মিত ডায়েটে রাখলে হজমশক্তি বাড়ে ও শরীর হালকা থাকে।

ব্যাকটেরিয়া-ছত্রাকের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক অস্ত্র

কলার পাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এর নির্যাস ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে। তাই গ্রামীণ জীবনে অনেক সময়ে ক্ষত বাঁধতে কিংবা খাবার ঢাকতে কলার পাতা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক গবেষণাও বলছে, এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।

পরিবেশবান্ধব বিকল্প

আজকের দিনে পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে কলার পাতা ও খোসা। এগুলি সম্পূর্ণ জৈব-অবচনযোগ্য এবং সহজে কম্পোস্ট করা যায়। অনেক রেস্টুরেন্ট কিংবা পূজার্চনায় এখনো কলার পাতা প্লাস্টিকের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। এতে শুধু পরিবেশই রক্ষা পায় না, খাবারও থাকে আরও সতেজ ও স্বাস্থ্যকর।

মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক

মুখের দুর্গন্ধ বা প্লাক জমার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে কলার খোসা। এতে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ মুখগহ্বরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষকরা মনে করছেন, নিয়মিত খোসার নির্যাস দিয়ে দাঁত বা মাড়ি ঘষলে দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

পুষ্টিগুণের আধার

কলার খোসা ও পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি-এর মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন, সঙ্গে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এগুলি হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে, পেশীর কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে ফলের মতোই কলার খোসা ও পাতা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রকৃতির দেওয়া অমূল্য উপহার

আমরা প্রায়শই কলার খোসা ও পাতাকে অকেজো ভেবে ফেলে দিই। অথচ এগুলিই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক অমূল্য ভান্ডার। ত্বক থেকে শুরু করে হজম, প্রদাহ কমানো থেকে মুখের স্বাস্থ্য—সবক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি পরিবেশ রক্ষার জন্যও এটি এক চমৎকার প্রাকৃতিক বিকল্প। তাই এখন থেকে কলা খাওয়ার পর খোসা ও পাতা ফেলে না দিয়ে ব্যবহার করুন বুদ্ধিমানের মতো।

 

Leave a comment