রাজ্যে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি, জেলাশাসকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে নবান্ন
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এক জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব। রাজ্যের প্রতিটি জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে চলে প্রায় ৪৫ মিনিটের এই বৈঠক। প্লাবনের জেরে বিভিন্ন জেলার বহু মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে—এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে নেওয়া হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ভাঙা ঘর, ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা প্রশাসনের
মাটির বাড়ি যারা হারিয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এবার ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে নতুন অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ। মুখ্যসচিব জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মাটির বাড়ির পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করে তবেই নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই প্রকল্পে। স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ শেষ করতে হবে, যাতে দুর্গত মানুষ দ্রুত নতুন আশ্রয় পান।
ত্রাণ বিলিতে অনিয়ম চলবে না, পরিষ্কার নির্দেশ নবান্নের
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ নিয়েও এদিন কঠোর বার্তা দেন মুখ্যসচিব। কোনওরকম অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ। মুখ্যসচিবের কথায়, “ত্রাণ যেন যোগ্য মানুষের হাতে ঠিকভাবে পৌঁছায়
চাষির পাশে সরকার, জোর প্রচারে ‘বাংলার শস্য বীমা’ প্রকল্প
বৈঠকে উঠে আসে কৃষকদের জন্য চালু থাকা ‘বাংলার শস্য বীমা’ প্রকল্পের প্রসঙ্গও। মুখ্যসচিব জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিরা যেসব সুবিধা পেতে পারেন, তা গ্রামের প্রান্তিক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। ক্যাম্প, বিজ্ঞাপন ও প্রচার বাড়াতে হবে, যাতে প্রকৃত উপভোক্তারা সরাসরি লাভবান হন।
রাজনৈতিক মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ, কটাক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ভূমিকাকে কটাক্ষ করে বলেন, “আগে কেন্দ্র বন্যা পরিস্থিতিতে টাকা দিত, এখন আর দেয় না। রাস্তাঘাট, আবাসন—সব আমাদেরই করতে হয়।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় বাকি থাকা ১৬ লক্ষ আবেদনকারীর জন্য শীঘ্রই টাকা ছাড় করা হবে।
‘ঘাটালে হেলিকপ্টারে নামিয়ে এনেছিলাম’, স্মৃতি উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে মমতা বলেন, “আমি প্রতিবারই দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই। একবার তো ঘাটালে তিনতলা বাড়ি থেকে হেলিকপ্টারে নামিয়ে এনেছিলাম।” তাঁর কথায়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সরকারের মূল লক্ষ্য, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকে সেই দায়িত্ব পালনের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
দ্রুত পুনর্বাসনের দিশা, বাংলার মানুষের স্বস্তি ফেরানোর লড়াই শুরু
নবান্নের তরফে বার্তা স্পষ্ট—ত্রাণ বিলিতে অনিয়ম বা বিলম্ব বরদাস্ত নয়। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত আবাসন পুনর্গঠন, শস্য বীমার সুবিধা এবং সঠিক ত্রাণ সরবরাহ—সবমিলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বড় দাওয়াই দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। দুর্যোগের দিনে ‘মুশকিল আসান’ হয়ে উঠতে চলেছে এই প্রশাসনিক পদক্ষেপ।