সুপ্রিম কোর্ট বাঁকে বিহারী মন্দির বিবাদে উত্তরপ্রদেশ সরকারের অধ্যাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শুনানি গ্রহণ করেছে। আদালত একটি কমিটি গঠন করে মধ্যস্থতার পরামর্শ দিয়েছে এবং ৫ই অগাস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
SC: বৃন্দাবনের বিখ্যাত শ্রী বাঁকে বিহারী মন্দির পরিচালনা সংক্রান্ত বিবাদে সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে। আদালত সোমবার শুনানির সময় এই বিষয়টির সমাধানের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের अध्यक्षताয় একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে আদালত সরকার এবং আবেদনকারীদের মধ্যস্থতার পথ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আদালত বলেছে যে ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং প্রথম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন, তাই এই বিষয়টির সমাধানেও আলোচনার চেষ্টা করা উচিত।
অধ্যাদেশ ২০২৫ নিয়ে বিতর্ক
বিষয়টি উত্তরপ্রদেশ সরকার কর্তৃক ২০২৫ সালে আনা একটি অধ্যাদেশের সাথে সম্পর্কিত, যার অধীনে বাঁকে বিহারী মন্দিরের ব্যবস্থা একটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীদের অভিযোগ, সরকার এর মাধ্যমে মন্দিরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাঁদের বক্তব্য, এই অধ্যাদেশ মন্দিরের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে এবং ধর্মীয় ভাবাবেগের সাথেও খেলা করে।
আবেদনকারীদের আপত্তি
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে বাঁকে বিহারী মন্দির একটি প্রাচীন ধর্মীয় স্থান এবং এর তত্ত্বাবধান যুগ যুগ ধরে পুরোহিত ও স্থানীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হয়ে আসছে। আবেদনকারীদের আরও বক্তব্য, সরকারের এই অধ্যাদেশ মন্দিরের ঐতিহ্যপূর্ণ স্বরূপ এবং স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করে।
সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য এবং প্রশ্ন
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। আদালত বলেছে যে, সর্বপ্রথম এই অধ্যাদেশের সাংবিধানিক বৈধতা এলাহাবাদ হাইকোর্ট কর্তৃক যাচাই করা উচিত। এছাড়াও আদালত এটাও জিজ্ঞাসা করেছে যে এত তাড়াহুড়ো করে এই অধ্যাদেশ কেন আনা হয়েছে। আদালত রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে মন্দির পরিচালনার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত পক্ষের সাথে আলোচনা করা জরুরি।
আদালতের ভর্ৎসনা ও সমাধানের পরামর্শ
আদালত সরকার ও মন্দির ট্রাস্ট উভয় পক্ষকে ভর্ৎসনা করে বলেছে যে, বিবাদটিকে প্রকাশ্যে না এনে এবং আইনি লড়াইয়ে না জড়িয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে সমাধানের চেষ্টা করুন। আদালত বলেছে যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বিবাদ আদালতে আনা উচিত নয় এবং প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা উচিত। এই লক্ষ্যে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা উভয়পক্ষের কথা শুনে রিপোর্ট পেশ করবে।
পরবর্তী শুনানি ৫ই অগাস্ট
সুপ্রিম কোর্ট মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ই অগাস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতের সামনে পেশ করা হবে। আদালত আশা প্রকাশ করেছে যে, কমিটির সাহায্যে উভয়পক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে। আদালত এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কমিটির রিপোর্ট থেকে সমাধান না বের হলে তারা নিজেরাই এই বিষয়ে বিস্তারিত শুনানি করবে।
অধ্যাদেশ ২০২৫-এর উদ্দেশ্য কী
উত্তরপ্রদেশ সরকার বাঁকে বিহারী মন্দিরের জন্য নতুন অধ্যাদেশ এনেছিল এই যুক্তিতে যে মন্দিরে আসা ভক্তদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং বর্তমান পরিচালনা ব্যবস্থা এই ক্রমবর্ধমান চাপ সামলাতে সক্ষম নয়। সরকারের দাবি, ট্রাস্টের মাধ্যমে মন্দিরের ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি স্বচ্ছ ও সুসংহত করা যেতে পারে। সরকার মন্দির চত্বরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং "বাঁকে বিহারী করিডোর" এর মতো প্রকল্পের প্রস্তাবও রেখেছে।