বাঁকুড়ায় রাতের আঁধারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা কোতুলপুরের সাইতারা অঞ্চলে আতঙ্কের রাত

বাঁকুড়ায় রাতের আঁধারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা কোতুলপুরের সাইতারা অঞ্চলে আতঙ্কের রাত

বৃহস্পতিবার রাত নামতেই বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার সাইতারা এলাকায় নেমে আসে বিভীষিকার দৃশ্য। রাতের অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলা বাসের সামনে হঠাৎই থেমে থাকা লরির পেছনে ঘটে বিধ্বংসী সংঘর্ষ। আরামবাগ থেকে বিষ্ণুপুরগামী বেসরকারি যাত্রিবাহী বাসটির সামনের অংশ মুহূর্তের মধ্যে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। সংঘর্ষের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে আশপাশের গ্রামবাসীরা আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।

লরির পেছনে সজোরে ধাক্কা, দুমড়ে-মুচড়ে বাসের অবস্থা

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাসটি দ্রুত গতিতে চলছিল এবং সম্ভবত চালক লরিটিকে শেষ মুহূর্তে লক্ষ্য করলেও গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। সজোরে ধাক্কার ফলে বাসের সামনের অংশ লোহার পাতের মতো ভাঁজ হয়ে যায়। জানালা ও সামনের কাঁচ ভেঙে উড়ে যায় চারদিকে। ভিতরে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার শুরু করেন, কেউ কেউ বাস থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

ঘটনাস্থলে ছুটে এল পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল

দুর্ঘটনার খবর পৌঁছাতেই কোতুলপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। অন্ধকার রাত, ক্ষতিগ্রস্ত বাস, এবং ভাঙা ধাতব অংশের ফাঁক দিয়ে যাত্রীদের বের করে আনতে পুলিশ ও স্থানীয়দের হিমশিম খেতে হয়। গুরুতর আহতদের দ্রুত কোতুলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, আর কিছুটা কম আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেখানেই করা হয়।

১৪ জন গুরুতর আহত, আশঙ্কাজনক চার

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৪ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাথায় ও বুকে গুরুতর আঘাত পাওয়া ওই চার জনকে দ্রুত আরামবাগ ও বিষ্ণুপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। বাকিদের কোতুলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে।

আহতদের মধ্যে শিশু ও মহিলা

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ও মহিলা রয়েছেন। কারও হাত-পা ভেঙেছে, কারও শরীরে গভীর কাটা ও আঘাতের চিহ্ন। অনেকেই এখনও শারীরিক যন্ত্রণা ও মানসিক আতঙ্কে বাকরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। হাসপাতালের করিডোরে তখন স্বজনদের আর্তনাদ ও উদ্বেগের ছায়া।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও নিরাপত্তা প্রশ্ন

দুর্ঘটনার পর এলাকায় বাস ও লরির অতিরিক্ত গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই সড়কে বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন তেমন উদ্যোগ নেয়নি। রাতের বেলায় লরির নির্দিষ্ট পার্কিং জায়গা না থাকায় প্রায়শই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে ভারী গাড়ি, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে কী বেরোল

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, বাস চালক হয়তো গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি অথবা দৃশ্যমানতা কম থাকায় লরিকে সময়মতো দেখতে পাননি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস ও লরি থানায় নিয়ে গিয়ে আরও তদন্ত চালানো হচ্ছে। চালকদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে মদ্যপানের পরীক্ষা করানো হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে উদ্যোগের দাবি

এই ঘটনার পর এলাকায় রাস্তার নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চান, রাতের বেলায় ভারী গাড়ির চলাচলে বিশেষ নিয়ম, পর্যাপ্ত আলো ও পুলিশের টহল বাড়ানো হোক। না হলে, তাঁদের আশঙ্কা, সাইতারার মতো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটবে।

Leave a comment