ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর

ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে অবশেষে সেই ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পন্ন হল, যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে लगातार আলোচনা চলছিল। ৪২ মাস অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন বছর আলোচনার পর এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই চুক্তিকে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য চুক্তি (সিইটিএ) নাম দেওয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টार्मার উভয়েই উপস্থিত ছিলেন।

৯৯ শতাংশ ভারতীয় পণ্য বিনা শুল্কে ব্রিটেনে পৌঁছবে

এই চুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ভারত থেকে ব্রিটেনে পাঠানো ৯৯ শতাংশ ভারতীয় পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক লাগবে না। এর মধ্যে বিশেষভাবে ভারতীয় কাপড়, জুতো, রত্ন-অলঙ্কার, সামুদ্রিক খাদ্য সামগ্রী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, এখন এই পণ্যগুলো ব্রিটেনের বাজারে খুব সহজেই এবং কম দামে পাঠানো যাবে।

ভারতে ৯০ শতাংশ ব্রিটিশ পণ্যের উপর কমবে ট্যাক্স

অন্যদিকে, ভারত ব্রিটেন থেকে আসা ৯০ শতাংশ পণ্যের আমদানির উপর ট্যাক্স অনেকটাই কমিয়ে দেবে। এর মধ্যে ব্রিটিশ হুইস্কি, হাই-এন্ড গাড়ি, এরোস্পেস সরঞ্জাম এবং মেডিকেল ডিভাইস রয়েছে। এতে ভারতীয় বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের উপস্থিতি আরও জোরদার হবে।

মোদী জানালেন যৌথ সমৃদ্ধির মডেল

চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এটা শুধু একটি বাণিজ্যিক চুক্তি নয়, এটি ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে যৌথ সমৃদ্ধির একটি শক্তিশালী কাঠামো। তিনি বলেন, এখন ভারতীয় পণ্য ব্রিটেনে আরও ভালো বাজার পাবে এবং ব্রিটিশ প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ভারতে সহজলভ্য করা যাবে।

ইউকে-র সংসদের সিলমোহর বাকি

ভারত সরকার এই চুক্তিটিকে ইতিমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু ব্রিটেনের পার্লামেন্ট থেকে এটি এখনও পাশ হওয়া বাকি। দুই দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় এবং বিস্তারিত বাণিজ্যিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দ্বিগুণ হবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য

দুই দেশেরই লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে বর্তমান ৫৬ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণ করা। এই চুক্তির মাধ্যমে সেই লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হতে পারে।

হুইস্কি ও গাড়ি হবে সস্তা

এই চুক্তির পর ব্রিটেন থেকে আমদানি করা দামি হুইস্কির দাম ধীরে ধীরে কমবে। এখনও পর্যন্ত ভারতে ব্রিটিশ হুইস্কির উপর ১৫০ শতাংশ ট্যাক্স লাগে, যা আগামী ১০ বছরে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হবে। একইভাবে, ব্রিটেন থেকে আসা বিলাসবহুল গাড়ির উপরও এখন ১১০ শতাংশের জায়গায় মাত্র ১০ শতাংশ ট্যাক্স লাগবে।

ইভি এবং হাইড্রোজেন কারে মিলবে না ছাড়

তবে এই চুক্তিতে ইলেকট্রিক ভেহিকেল, হাইব্রিড কার এবং হাইড্রোজেন চালিত গাড়িকে ট্যাক্স ছাড়ের বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, এই পরিবেশবান্ধব গাড়িগুলোর উপর আপাতত কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্ত আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

ডুয়াল কন্ট্রিবিউশন এগ্রিমেন্ট থেকে ভারতীয়দের স্বস্তি

সিইটিএ-র পাশাপাশি ভারত ও ব্রিটেন ডুয়াল কন্ট্রিবিউশন চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে। এর অধীনে আগামী তিন বছরে ব্রিটেনে কর্মরত ৭৫ হাজার ভারতীয় পেশাদারকে दोहरा সামাজিক सुरक्षा अंशदान দিতে হবে না। এতে এই লোকেদের রোজগারের উপর ট্যাক্সের বোঝা কমবে এবং সঞ্চয় বাড়বে।

সরকারি কেনাকাটায় ব্রিটিশ কোম্পানিকে জায়গা দেবে ভারত

ভারত এই চুক্তিতে প্রথমবার ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে সরকারি কেনাকাটার (Government Procurement Market) সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থাৎ, এখন ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো ভারত সরকারের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় সুরক্ষা ও কৌশলগত ক্ষেত্রগুলোকে বাইরে রাখা হয়েছে।

কার্বন ট্যাক্সের উপর কোনো সমাধান নেই

এই চুক্তিতে ভারতের একটি প্রধান উদ্বেগের সমাধান করা যায়নি। ২০২৭ সাল থেকে ব্রিটেনে চালু হতে চলা কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (CBAM) অর্থাৎ কার্বন ট্যাক্স নিয়ে কোনো স্পষ্ট নীতি এই চুক্তিতে দেওয়া হয়নি। ভারতের বিশ্বাস, এই ট্যাক্স তাদের শিল্পের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলতে পারে।

বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে নতুন অংশীদারিত্ব

এই চুক্তি এমন এক সময়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে, যখন বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য যুদ্ধের পরিস্থিতি চলছে। আমেরিকা, ইউরোপ ও চীনের মধ্যে लगातार टैरिफ वॉर চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত ও ব্রিটেনের এই চুক্তি বিশ্ব মঞ্চে একটি संतुलित এবং সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a comment