কাওঁড় যাত্রার সময় শ্রদ্ধা ও আস্থায় আঘাত হানার একটি ঘটনা মুজাফ্ফরনগরের পুরকাজি কসবা থেকে সামনে এসেছে। সোমবার এখানে এক মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে কাওঁড়ের উপর থুতু ফেলার গুরুতর অভিযোগ ওঠে, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই বিপুল সংখ্যক শিবভক্ত ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ পরিস্থিতিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, অভিযুক্ত যুবককে আটক করা হয়, যার পরিচয় উসমান, পিতা ঘাসিটা, বাসিন্দা পুরকাজি হিসাবে জানা গেছে।
ঘটনাটি কী?
এই ঘটনাটি তখন ঘটে যখন হরিদ্বার থেকে দিল্লিগামী কাওঁড়যাত্রীদের একটি দল মুজাফ্ফরনগরের পুরকাজি কসবা দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়, অভিযোগ অনুসারে, এক যুবক এক মহিলা কাওঁড়িয়ার সঙ্গে যাওয়া শিবভক্তদের কাওঁড়ের উপর থুতু ফেলে দেয়। এই কাজে কাওঁড় যাত্রায় অংশগ্রহণকারী ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বিপুল সংখ্যক লোক ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং রাস্তার একপাশে অবরোধ করে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে যে কিছু ভক্ত একটি বাড়ির ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসপি সিটি সত্যনারায়ণ প্রজাপত স্বয়ং ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে, হরিদ্বার থেকে পুনরায় পবিত্র গঙ্গাজল আনানো হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত কাওঁড়ের পরিবর্তে নতুন কাওঁড় দিয়ে কাওঁড়িয়াদের যাত্রা পুনরায় শুরু করার ব্যবস্থা করা হয়।
অভিযুক্ত গ্রেফতার
ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত উসমানকে আটক করে তার বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ জানতে পারে যে অভিযুক্ত শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী, যার কারণে তদন্তে সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ এখন সাংকেতিক ভাষা (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ) বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যাতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করা যায়।
এসপি সিটি সত্যনারায়ণ প্রজাপত জানিয়েছেন, মহিলা কাওঁড়িয়া তার কাওঁড় কিছুক্ষণের জন্য নিচে রেখেছিলেন, তখনই এক যুবক এসে সেটির উপর থুতু ফেলে দেয়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী, তাই তার সাথে কথা বলার জন্য বিশেষ ভাষা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মুসকানের বয়ান
ঘটনার শিকার এবং দিল্লির বাসিন্দা শিবভক্ত মুসকান পুলিশের প্রাথমিক তথ্যের উপর প্রশ্ন তুলেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন না, বরং যাত্রাপথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মুসকান বলেন, “আমি মুখ ধোয়ার জন্য কিছুক্ষণ থেমেছিলাম, আমার ভাইয়ের ১০১ লিটারের কাওঁড় কাছেই ছিল। তখনই এক যুবক এসে কাওঁড়ের উপর থুতু ফেলে দেয়। এই কাজ আমাদের বিশ্বাস ও যাত্রার সম্পূর্ণ অপমান।”
মুসকান আরও বলেন যে ঘটনার ফলে তিনি স্তম্ভিত এবং এই ধরনের কাজ সমাজে পারস্পরিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। তিনি প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
ভিডিও কলে অভিযুক্তের ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টা
ঘটনার পর যখন কাওঁড়যাত্রীদের দল শহরের শিব চকে পৌঁছায়, তখন এসপি সিটি সত্যনারায়ণ প্রজাপত নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পুলিশ ভিডিও কলের মাধ্যমে জেলে বন্দী অভিযুক্ত উসমানকে কাওঁড়িয়াদের উপস্থিতিতে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। অভিযুক্তের ক্ষমা চাওয়ার পর শিবভক্তরা শান্ত হন এবং তাদের যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
পুলিশ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে
এই ঘটনার পরে পুলিশ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের গুজব বা উত্তেজনা পুনরায় না ছড়ায়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে পুরো ঘটনার গভীর তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্ত শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী কিনা, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে, প্রশাসন জনসাধারণের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছে এবং কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।