বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: রাজা পাকর আসনে কংগ্রেস, আরজেডি ও জেডিইউ-এর মধ্যে কড়া লড়াইয়ের আভাস

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: রাজা পাকর আসনে কংগ্রেস, আরজেডি ও জেডিইউ-এর মধ্যে কড়া লড়াইয়ের আভাস

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর ঘোষণা শীঘ্রই। বৈশালী জেলার রাজা পাকর আসনে কংগ্রেস, আরজেডি এবং জেডিইউ মুখোমুখি। ২২% দলিত এবং ৬% মুসলিম ভোটার থাকার কারণে এই এসসি সংরক্ষিত আসনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: বিহারে নির্বাচনের পরিবেশ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময় তারিখ ঘোষণা করতে পারে এবং সমস্ত দল তাদের কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরই মধ্যে, বৈশালী জেলার রাজা পাকর বিধানসভা আসনটি রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই আসনটি তফসিলি জাতি (এসসি)-এর জন্য সংরক্ষিত এবং প্রতিবার বিভিন্ন দলকে জয়ী হতে দেখেছে। এই কারণেই এখানকার সমীকরণকে আকর্ষণীয় বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজা পাকর আসনের পরিচিতি

রাজা পাকর বিধানসভা আসনটি বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে একটি। এর নির্বাচনী ক্ষেত্র সংখ্যা ১২৭। এই আসনটি বৈশালী জেলার অন্তর্গত এবং হাজিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অংশ। এই আসনটি তফসিলি জাতি (এসসি) শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। বর্তমানে এই আসনে কংগ্রেসের দখল রয়েছে এবং প্রতিমা কুমারী দাস বিধায়ক। ২০২০ সালে তিনি এখান থেকে জয়লাভ করেছিলেন।

রাজা পাকরে কত ভোটার আছেন

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজা পাকর আসনে মোট ২,৭২,২৬৬ জন ভোটার নিবন্ধিত ছিলেন। এদের মধ্যে ১,৪৬,৯৪৯ জন পুরুষ, ১,২৫,২৯৩ জন মহিলা এবং ১৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন। এটি একটি গ্রামীণ এলাকা যেখানে জাতিগত এবং সম্প্রদায়িক সমীকরণের প্রভাব বেশি থাকে।

এই আসনে তফসিলি জাতি (এসসি) সম্প্রদায়ের প্রায় ২২ শতাংশ ভোটার রয়েছে। অন্যদিকে, মুসলিম ভোটারদের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাংশ। এই দুটি গোষ্ঠী ছাড়াও যাদব, কুর্মি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটাররাও এখানে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেন।

পূর্ববর্তী নির্বাচনের ফলাফল

রাজা পাকর আসনটি ২০০৮ সালে গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মজার বিষয় হলো, এই তিনটি প্রধান দল—জেডিইউ, আরজেডি এবং কংগ্রেস—প্রত্যেকেই একবার করে এখান থেকে জয়ী হয়েছে।

২০২০ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রতিমা কুমারী দাস জেডিইউ-এর মহেন্দ্র রামকে কড়া লড়াইয়ে পরাজিত করেন। প্রতিমা ৫৩,৬৯০ ভোট পেয়েছিলেন, অন্যদিকে মহেন্দ্র রাম পেয়েছিলেন ৫২,৫০৩ ভোট। দুজনের মধ্যে মাত্র ১,৬৯৭ ভোটের ব্যবধান ছিল। তৃতীয় স্থানে ছিল এলজেপি-র ধঞ্জঞ্জয় কুমার, যিনি ২৪,৬৮৯ ভোট পেয়েছিলেন।

  • ২০১৫ সালে এই আসনটি আরজেডি-র শিবচন্দ্র রাম জিতেছিলেন।
  • ২০১০ সালে জেডিইউ-এর সঞ্জয় কুমার জয়লাভ করেছিলেন।

২০২৫-এর জন্য সমীকরণ

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। কংগ্রেসের বর্তমান বিধায়ক প্রতিমা কুমারী দাস পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অন্যদিকে, জেডিইউ এবং আরজেডি উভয়ই এই আসনটি জিততে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।

যেহেতু এই আসনটি এসসি শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত, তাই দলিত সমাজের রাজনৈতিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২২ শতাংশ দলিত ভোটার এবং প্রায় ৬ শতাংশ মুসলিম ভোটার মিলে এখানকার নির্বাচনী সমীকরণ বদলানোর ক্ষমতা রাখে। যদি কোনো দল এই সমীকরণকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে জয় তাদের হাতে আসতে পারে।

জাতিগত সমীকরণের ভূমিকা

বিহারের রাজনীতি জাতিগত সমীকরণের চারপাশে ঘোরে এবং রাজা পাকরও এর বাইরে নয়। এখানে তফসিলি জাতির পাশাপাশি যাদব, মুসলিম এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটাররা নির্ণায়ক।

  • এসসি ভোটার: প্রায় ২২%
  • মুসলিম ভোটার: প্রায় ৬%
  • যাদব এবং অন্যান্য ওবিসি: বিপুল সংখ্যায়

এই সমস্ত সম্প্রদায় মিলে নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। ২০২০ সালে কংগ্রেস মুসলিম এবং এসসি ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সমর্থন পেয়েছিল। জেডিইউ-ও একটি শক্তিশালী ভিত্তি পেয়েছিল, কিন্তু সামান্য ব্যবধানে হেরে যায়।

স্থানীয় সমস্যাগুলির প্রভাব

স্থানীয় স্তরে উন্নয়ন, সড়ক, বিদ্যুৎ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যর মতো বিষয়গুলি এখানকার রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। কৃষকদের সমস্যা এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের বিষয়টিও একটি বড় ফ্যাক্টর।

যেহেতু এই অঞ্চলটি গ্রামীণ, তাই মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব নিয়ে প্রায়শই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির সামাজিক অবস্থাও এখানে ভোটারদের পছন্দের বিষয়গুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

কারা এগিয়ে?

২০২৫ সালের নির্বাচনে কে জিতবে, তা এখনই বলাটা তাড়াহুড়ো হবে। তবে, যদি অতীতের প্রবণতাগুলি দেখা হয়, তবে তিনটি দল—কংগ্রেস, জেডিইউ এবং আরজেডি—প্রত্যেকেরই এখানে নিজস্ব শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।

  • বর্তমান বিধায়ক হওয়ায় কংগ্রেস এখানে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
  • আরজেডি যাদব এবং মুসলিম ভোটারদের কাছ থেকে ঐতিহ্যবাহী সমর্থন পেতে পারে।
  • জেডিইউ নীতীশ কুমারের ভাবমূর্তি এবং তাদের স্থানীয় প্রার্থীর উপর বাজি ধরবে।
  • এলজেপি-ও দলিত ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর রাখবে এবং এখানে প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a comment