বিহারের আইন-শৃঙ্খলা: বিজেপি ও জেডিইউ-এর মধ্যে মতবিরোধ

বিহারের আইন-শৃঙ্খলা: বিজেপি ও জেডিইউ-এর মধ্যে মতবিরোধ

বিহারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক দল—বিজেপি এবং জেডিইউ-এর মধ্যে সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এসেছে। রাজ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা অপরাধের ঘটনা নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতা রামেশ্বর চौरসিয়া, নীতীশ সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উত্তর প্রদেশের ধাঁচে 'যোগী মডেল' প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

চৌরসিয়া স্পষ্ট করে বলেন, খুন, ডাকাতি এবং ধর্ষণ-এর মতো ঘটনাগুলি বিহারে এখন সাধারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং অপরাধীদের মধ্যে আইনের কোনও ভয় নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অপরাধ দমন করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে যেভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই ধরনের পদক্ষেপ বিহারেও নেওয়া উচিত।

বিজেপি নেতা আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে একসময় বিহারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরপ্রদেশ থেকে ভালো ছিল, কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি বলেন, যতক্ষণ না সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে, ততক্ষণ পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। তাঁর এই বক্তব্য কেবল নীতীশ সরকারের কার্যকারিতার উপর সরাসরি আঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে না, বরং এর মাধ্যমে এনডিএ-এর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

 নীতীশ মডেলই আসল সুশাসন

বিজেপি নেতার এই মন্তব্যের উপর জেডিইউ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র অভিষেক ঝাঁ বলেন, নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিহারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, নীতীশ কুমারের 'নো কম্প্রোমাইজ' নীতিই বিহারের পরিচিতি এবং অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার কখনও আপোস করে না।

ঝাঁ আরও যোগ করেন যে, অপরাধের খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয় এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা মডেলটি দেশের অনেক রাজ্য অনুসরণ করে। তিনি বিজেপি নেতার বক্তব্যকে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে রাজ্যের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেডিইউ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে বিহারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সুদৃঢ় এবং সুস্পষ্ট।

নির্বাচনের বছরে এনডিএ-এর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠল আইন-শৃঙ্খলা

এই পুরো বিতর্কটি শুধু এনডিএ-এর অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যকেই সামনে আনেনি, বরং এও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই রাজ্যে 'জঙ্গলরাজ'-এর প্রত্যাবর্তনের অভিযোগ তুলে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানাচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্বরাষ্ট্র দপ্তর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের হাতে এবং রাজ্যে বেড়ে চলা অপরাধের পরিসংখ্যান এখন তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতাদের এই কঠোর মনোভাব ইঙ্গিত দেয় যে, আগামী দিনে জোটের অভ্যন্তরে অন্তর্কলহ আরও তীব্র হতে পারে।

'যোগী মডেল' বনাম 'নীতীশ মডেল'-এর এই বিতর্ক এখন আর কেবল কথার লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এনডিএ-এর অন্দরে সবকিছু স্বাভাবিক নয়। বিহারে অপরাধের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ কৌশল নেওয়ার পরিবর্তে এখন নীতি এবং নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যা ক্ষমতাসীন জোটের জন্য ভবিষ্যতে আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

Leave a comment