অখিলেশ যাদব ও অনিরুদ্ধাচার্যের 'শূদ্র' বিতর্কের ভিডিও: জাতিবাদ নিয়ে নতুন বিতর্ক

অখিলেশ যাদব ও অনিরুদ্ধাচার্যের 'শূদ্র' বিতর্কের ভিডিও: জাতিবাদ নিয়ে নতুন বিতর্ক

অখিলেশ যাদব এবং কথাবাচক অনিরুদ্ধাচার্যের মধ্যে 'শূদ্র' শব্দ নিয়ে হওয়া বিতর্কের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা জাতিবাদ এবং বর্ণ ব্যবস্থার উপর নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।

লখনউ: সোশ্যাল মিডিয়া আবারও উত্তপ্ত, তবে এবারকার বিষয় শুধু রাজনীতি নয়, বরং সামাজিক চেতনা এবং বর্ণ ব্যবস্থা জড়িত। সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব এবং প্রসিদ্ধ কথাবাচক অনিরুদ্ধাচার্যের মধ্যে ‘শূদ্র’ শব্দ নিয়ে হওয়া বিতর্কের ভিডিওটি এখন ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের, তবে যে ভাবে এটি পুনরায় আলোচনায় এসেছে, তা রাজনৈতিক এবং ধার্মিক উভয় মহলেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ভাইরাল ভিডিওর আসল ঘটনা কী?

এই ভিডিওটি একটি জনসমক্ষে হওয়া সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের, যেখানে অখিলেশ যাদব এবং অনিরুদ্ধাচার্য মুখোমুখি হয়েছিলেন। কথাবাচক অনিরুদ্ধাচার্য কথোপকথনের সময় বর্ণ ব্যবস্থার উল্লেখ করে ‘শূদ্র’ শব্দটি ব্যবহার করলে, অখিলেশ যাদব তৎক্ষণাৎ তাকে থামিয়ে দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেন – 'আজ থেকে কাউকে শূদ্র বলবেন না।' তাঁর এই বক্তব্যে শুধু অনিরুদ্ধাচার্য অস্বস্তিতে পড়েননি, বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই বিতর্কের তীব্রতা এতটাই ছিল যে অখিলেশ যাদব আলোচনার শেষে বলেছিলেন – 'এখান থেকেই আমাদের ও আপনাদের পথ আলাদা হয়ে যায়।'

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং পিডিএ-এর উল্লেখ

অখিলেশ যাদবের এই মন্তব্য সেই সময়ে আসে যখন তিনি তাঁর পিডিএ (পিছিয়ে পড়া, দলিত, সংখ্যালঘু) জোটের विचारधाराকে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০২৩ সালে দেশের রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছিল এবং অখিলেশ যাদব ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অধিকারের কথা বলছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে যখন একজন কথাবাচক বর্ণ ব্যবস্থার সমর্থন করলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই অখিলেশের প্রতিবাদ জানানোটা ছিল প্রত্যাশিত।

অনিরুদ্ধাচার্য কে?

অনিরুদ্ধাচার্য, যিনি ‘পুঁকি বাবা’ নামেও পরিচিত, ধর্মীয় कथा ও রামায়ণ-মহাভারতের মতো গ্রন্থগুলির ব্যাখ্যায় তাঁর নিজস্ব শৈলীর জন্য বিখ্যাত। তিনি তাঁর ভাষণে প্রায়শই বর্ণ ব্যবস্থার সমর্থন করেন, যেখানে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রের শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা করা হয়। কিন্তু এই শ্রেণীবিভাগ আজকের দিনে রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে একটি সংবেদনশীল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর যখন তিনি একই কথা অখিলেশ যাদবের সামনে পুনরাবৃত্তি করেন, তখন বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে।

সপা-র সমর্থকদের দাবি – 'মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন'

সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় উৎসাহের সঙ্গে শেয়ার করছেন। তাঁদের বক্তব্য, অখিলেশ যাদব শাস্ত্রের সঠিক অর্থ বুঝিয়ে কথাবাচকের 'মুখ বন্ধ' করে দিয়েছেন। কিছু সমর্থক বলেছেন, এমন নেতাই দরকার যিনি সমাজে সম্মান ও সমতার কথা বলবেন, হাজার বছরের পুরনো জাতি ব্যবস্থার সমর্থন করবেন না।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে, ধর্মীয় সংগঠন এবং কিছু দক্ষিণপন্থী নেতা এই ভিডিওটিকে অখিলেশ যাদবের “ধর্ম-বিরোধী চিন্তাভাবনার” প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, শাস্ত্রে বর্ণ ব্যবস্থার বর্ণনা রয়েছে এবং তা অস্বীকার করা ধর্মীয় মূল্যবোধের অবমাননা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে অখিলেশ যাদব ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মগুরুদের নিশানা করে তাঁর ভোট ব্যাংককে শক্তিশালী করতে চাইছেন।

ইটাওয়ার ঘটনা সংবেদনশীলতা বাড়িয়েছে

এই বিষয়টিকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তুলেছে ইটাওয়ার একটি পুরনো ঘটনা, যেখানে এক যাদব জাতির কথাবাচক এবং তাঁর দলিত সঙ্গীদের অপমানজনক আচরণের শিকার হতে হয়েছিল। এর পরে অখিলেশ যাদব বাagesশ্বর বাবা সহ আরও অনেক বড় কথাবাচকের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘ধর্মের নামে জাতের প্রচার আর চলবে না।’

জাতি বনাম ধর্ম – নতুন বিতর্কের সূচনা

এই ভিডিওটি আবারও এই প্রশ্ন তোলে যে, আজকের ভারতে ধর্ম ও জাতির ব্যাখ্যা কি পুরনো বই থেকে করা উচিত, নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবতা ও সমতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত? অখিলেশ যাদবের বক্তব্যকে ‘সামাজিক সমতা’-র বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে কেউ কেউ এটিকে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ হিসেবেও বর্ণনা করছেন।

Leave a comment