উজ্জ্বলা যোজনার অপব্যবহার: ২ লক্ষ মহিলার গ্যাস সংযোগে কারচুপি, অডিট তদন্তের নির্দেশ

উজ্জ্বলা যোজনার অপব্যবহার: ২ লক্ষ মহিলার গ্যাস সংযোগে কারচুপি, অডিট তদন্তের নির্দেশ

মধ্যপ্রদেশে উজ্জ্বলা যোজনার অপব্যবহারের ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে ২ লক্ষ মহিলা ভর্তুকির সুবিধা পাওয়ার জন্য গ্যাস সংযোগ থেকে পুরুষদের নাম সরিয়েছেন, এবার হবে অডিট তদন্ত।

ভোপাল: দেশের কোটি কোটি মহিলাদের রান্নার ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিতে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (PMUY) আজ একটি বড় জালিয়াতির শিকার হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ২ লক্ষ মহিলা তাদের গার্হস্থ্য গ্যাস সংযোগ থেকে স্বামী বা অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের নাম সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা ‘লাড়লি বহনা’ যোজনা সহ উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাগুলি একসঙ্গে নিতে পারেন।

এই ঘটনাটি এখন রাজ্য সরকার এবং খাদ্য সরবরাহ বিভাগের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলস্বরূপ বিভাগটি পুরো ঘটনার একটি স্বাধীন অডিট তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, তেল সংস্থাগুলিকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও নতুন স্থানান্তর আবেদন গ্রহণ করবে না।

পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ভালো, কিন্তু নিয়তে গলদ

প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার উদ্দেশ্য হল দরিদ্র পরিবার, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের মহিলাদের ধোঁয়াহীন রান্নাঘর সরবরাহ করা। এই প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের ৪৫০ টাকায় ভর্তুকিযুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য কিছু লোক নিয়মের ফাঁক ফোকর গলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

‘লাড়লি বহনা যোজনা’-র অধীনে রাজ্য সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল মহিলাদের প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়। নিয়ম অনুসারে, যদি পরিবারে আগে থেকেই উজ্জ্বলা যোজনার অধীনে কোনও পুরুষ সদস্যের নামে গ্যাস সংযোগ থাকে, তবে মহিলা উজ্জ্বলা ভর্তুকির সুবিধা পাবেন না। এই ফাঁকটির সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার মহিলা তাদের স্বামী বা অন্য কোনও পুরুষ সদস্যের নাম থেকে গ্যাস সংযোগ সরিয়ে তা নিজের নামে করেছেন, যাতে উভয় প্রকল্পের সুবিধা একসঙ্গে পাওয়া যায়।

গভীর সন্দেহ, গভীর তদন্তের প্রস্তুতি

খাদ্য বিভাগ যখন এই ধরনের ঘটনার কথা জানতে পারে, তখন তারা একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠায়। প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে এই ধরনের সংযোগ স্থানান্তরে ব্যাপক অনিয়ম হতে পারে। এরপরে, বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে:

  • নতুন সংযোগ স্থানান্তরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে
  • তেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা এই ধরনের কোনও আবেদন গ্রহণ করবে না
  • একটি স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পের অডিট করার প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে

অডিটে কোন বিষয়গুলির তদন্ত হবে?

খাদ্য বিভাগ সূত্রে খবর, অডিট চলাকালীন নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নিবিড় তদন্ত করা হবে:

  1. গ্যাস সংযোগটি প্রথমে কার নামে ছিল এবং কত দিন ধরে ছিল
  2. নাম পরিবর্তনের কারণ ও সময়কাল
  3. মহিলা সুবিধাভোগীরা সত্যিই উজ্জ্বলা এবং লাড়লি বহনা উভয় প্রকল্পের যোগ্য কিনা
  4. গ্যাস রিফিলিংয়ে কোনও বাধা বা অভিযোগ আছে কিনা
  5. মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে কিনা
  6. শিশুদের পড়াশোনা ও বাড়ির অন্যান্য দায়িত্ব পালনে সাহায্য হয়েছে কিনা
  7. এই পরিবর্তন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করছে কিনা

দুর্নীতির নতুন চেহারা: 'স্মার্ট জালিয়াতি'

এই কেলেঙ্কারি কেবল টাকার হেরফের নয়, বরং এটি স্মার্ট উপায়ে প্রকল্পগুলির অপব্যবহার। যে মহিলাদের নামে এখন গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই এই পরিবর্তন ঘটিয়েছেন শুধুমাত্র যাতে তাঁরা উজ্জ্বলা ভর্তুকির পাশাপাশি লাড়লি বহনা যোজনার অর্থও পেতে পারেন। এটি প্রকল্পের মূল ভাবনার উপর আঘাত হেনেছে এবং সরকারি তদারকি ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশাসন সতর্ক, এবার নামের খেলা চলবে না

মধ্যপ্রদেশে উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রায় ২ লক্ষ মহিলা তাদের গ্যাস সংযোগ থেকে স্বামী বা কোনও পুরুষ সদস্যের নাম সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা ভর্তুকি পেতে পারেন। এবার এই গোলমাল বন্ধ করতে সরকার তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা অনুমতি ছাড়া কোনও নাম পরিবর্তন গ্রহণ করবে না।

বিরোধী দলগুলি কী বলছে?

বিরোধী দলগুলি উজ্জ্বলা যোজনার এই গোলমাল নিয়ে সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে। তাঁদের বক্তব্য, যখন সরকার নিজেই তাদের প্রকল্পগুলিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারছে না, তখন সাধারণ মানুষ কীভাবে এই ধরনের ব্যবস্থার উপর ভরসা করবে। নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন যে, যদি ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে তদন্তের পর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, যা প্রকল্পের ভাবমূর্তির উপর বড় প্রভাব ফেলবে।

Leave a comment