জন্মের সার্টিফিকেটে নাম বা জন্ম তারিখ পাল্টাতে এবার লাগবে ঘাম-ঝরানো তথ্যপ্রমাণ!রাজ্যের কড়া নির্দেশিকায় নয়া ধাক্কা

জন্মের সার্টিফিকেটে নাম বা জন্ম তারিখ পাল্টাতে এবার লাগবে ঘাম-ঝরানো তথ্যপ্রমাণ!রাজ্যের কড়া নির্দেশিকায় নয়া ধাক্কা

রাজ্যজুড়ে জারি হল নতুন নির্দেশিকা, দুর্নীতি রুখতে স্বাস্থ্যদফতরের কড়া পদক্ষেপ

জন্ম শংসাপত্র সংশোধনের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছিল বিভিন্ন জেলা থেকে। কেউ জন্ম তারিখ বদলে ফেলছেন, কেউ আবার মায়ের-বাবার পরিচয় ঘেঁটে নাম পাল্টাচ্ছেন! এবার সেই ফাঁক বন্ধ করতে কোমর বেঁধেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যদফতর জারি করল কঠোর গাইডলাইন, যাতে চট করে আর বদলানো যাবে না নাম বা জন্ম-তারিখ।

নার্স নয়, এবার থেকে মেডিকেল অফিসার— কড়া নজরে জন্ম রেজিস্টার

স্বাস্থ্য দফতরের নতুন গাইডলাইনে জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি হাসপাতালে যে নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরা এতদিন জন্ম রেজিস্টারে তথ্য লিখতেন, তাঁদের জায়গায় দায়িত্বে থাকবেন এক একজন মেডিকেল অফিসার। এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হল রেজিস্টারিংয়ের সময় যে অনিয়মগুলি হতো, তা আটকানো। জন্মের তথ্য রেকর্ডের সময় থেকে শুরু করে নাম নথিভুক্তি— সবেতেই থাকবে চিকিৎসকস্তরের পর্যবেক্ষণ।

জেলা প্রশাসন ও পুরসভার উপর চাপ, জারি হল নির্দেশিকামূলক চিঠি

রাজ্যের প্রতিটি জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও কলকাতা পুরসভার কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে নির্দেশিকামূলক চিঠি। তাতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, আগামিদিনে জন্মের সময় নাম না থাকলে কিংবা অন্য কোনো তথ্য সংশোধনের দরকার হলে কঠোর নিয়মকানুন মানতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকে।

নামের বানান ভুল হলেও লাগবে তথ্যপ্রমাণ, বদলানো যাবে না বাবার নাম

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যদি কারও নামের বানানে কোনও ক্লারিক্যাল ভুল হয়— সেক্ষেত্রেও চলবে না ছাড়। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নথি ছাড়া সংশোধন অসম্ভব। পাশাপাশি মাতা-পিতার বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও শিশুর নাম থেকে বাবার নাম মুছে ফেলার কোনও সুযোগ থাকবে না। এমনকী বাবা অনুপস্থিত থাকলেও বা ডিভোর্স হয়ে গেলেও জন্মের সময় দেওয়া তথ্য অপরিবর্তনীয়।

নাম ছাড়া রেজিস্টার হলে যুক্ত করা যাবে, তবে শর্তে শর্তে

জন্মের সময় যদি শিশুর নাম রেজিস্টারে না থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট প্রমাণ দেখিয়ে নতুন করে নাম যুক্ত করা যেতে পারে। তবে সেটা একমাত্র রেজিস্টার অফিসার মান্যতা দিলে তবেই হবে। আর যাদের নাম আগেই ছিল, সেই নামই থাকবে চিরকাল। নাম পাল্টানোর অজুহাতে জন্মতারিখ বদলানো একেবারে নিষিদ্ধ।

জন্মের সময়, স্থান ও পরিচয়— একবার নথিভুক্ত হলেই বদল নয় কোনওভাবেই

নতুন গাইডলাইনে সবথেকে কঠোর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে জন্মতারিখ, স্থান এবং ব্যক্তিগত পরিচয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। একবার যদি বার্থ সার্টিফিকেটে জন্মস্থান বা জন্মের সময় লেখা থাকে, তাহলে তা আর কোনওভাবেই বদলানো যাবে না। খুব বিশেষ প্রয়োজনে, উপযুক্ত সরকারি নথি ও আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও বদল ঘটানো যাবে না।

ব্যক্তিগত ইচ্ছেতে নাম বদল নয়, প্রমাণ ছাড়া কিছুই নয়!

নিজের পরিচয় পাল্টাতে চাইলে শুধু ইচ্ছেটুকু যথেষ্ট নয়। জন্ম শংসাপত্রে নাম পরিবর্তন করতে চাইলে লাগবে উপযুক্ত কারণ এবং সেই সঙ্গে তথ্য-প্রমাণের শক্তিশালী ভিত্তি। নিছক নিজের পছন্দ বা ব্যক্তিগত কারণে নাম পাল্টাতে ইচ্ছুক হলে তা আর সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিল স্বাস্থ্যদফতর।

জন্ম তারিখ বা নাম বদলের রাস্তা কার্যত বন্ধ, স্বচ্ছতা আনতেই নতুন উদ্যোগ

এই নতুন নির্দেশিকাগুলির মাধ্যমে রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে— জন্ম শংসাপত্রের মত গুরুত্বপূর্ণ নথিতে অকারণে পরিবর্তন ঠেকাতে হবে। এহেন কঠোর পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি কমবে, তেমনই নাগরিকদের মধ্যেও জন্মসংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে বলে মত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।

Leave a comment