ওড়িশায় ফের জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের ছায়া ভয়াবহ মাওবাদী বিস্ফোরণে রেললাইন উড়ে গেল রেলকর্মীর মৃত্যু রাজ্যে নিরাপত্তা ঘিরে চরম উদ্বেগ

ওড়িশায় ফের জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের ছায়া ভয়াবহ মাওবাদী বিস্ফোরণে রেললাইন উড়ে গেল রেলকর্মীর মৃত্যু রাজ্যে নিরাপত্তা ঘিরে চরম উদ্বেগ

রবিবার সকালেই বিস্ফোরণ, লক্ষ্য রেল অবকাঠামো— শহিদ সপ্তাহের শেষ দিনে জারি আতঙ্ক রবিবার সকাল সাড়ে ছ’টা। আচমকাই প্রচণ্ড বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দেয় ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের তোপাডিহি এলাকা। মাওবাদী হামলায় রেল লাইনের স্লিপার সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস কাণ্ডের স্মৃতি যেন ফিরে এলো। ওই বিস্ফোরণের ফলে প্রাণ হারান এক রেলকর্মী। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আরেকজন।

IED বিস্ফোরণে চক্রধরপুর ডিভিশনের রেল রুট ক্ষতিগ্রস্ত, বন্ধ ট্রেন চলাচল

এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাংরা-করমপাড়া রেল রুট। চক্রধরপুর ডিভিশনের অধীনস্থ এই লাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শহিদ সপ্তাহের মধ্যে এই হামলা হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে— আগাম সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও কেন রক্ষা করা গেল না রেল পরিকাঠামোকে?

ট্রেন থাকলে হতে পারত মহা বিপর্যয়! রক্ষা করল স্রেফ কপাল

ঘটনার সময় লাইনের উপর দিয়ে কোনও ট্রেন না যাওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে বলেই স্বস্তিতে প্রশাসন। তবে মনে করা হচ্ছে, যদি সেই মুহূর্তে কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত, তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারত। এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নিরাপত্তা মহলে— তাহলে কি আসছে দিনে ট্রেন লক্ষ্য করেই আরও বড় হামলা চালাতে চলেছে মাওবাদীরা?

শহিদ সপ্তাহেই বিস্ফোরণ! মাওবাদীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার প্রশ্ন

২৮ জুলাই থেকে ৩ অগাস্ট পর্যন্ত মাওবাদীদের 'শহিদ সপ্তাহ' পালন চলছিল। আর ঠিক এই বিশেষ সপ্তাহের শেষ দিনেই ভয়ানক বিস্ফোরণ। বন্‌ধের ডাকও ছিল ওই দিনেই। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তাবাহিনী কীভাবে আগাম ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হল? গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে আরপিএফের যৌথ তদন্ত শুরু, জারি রেল সতর্কতা

ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে আরপিএফ, ওড়িশা পুলিশ ও ঝাড়খণ্ড পুলিশ। তিন বাহিনীর যৌথ তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে আইইডি কোথা থেকে এল, কারা ঘটাল বিস্ফোরণ। রেল লাইনের ক্ষয়ক্ষতি নিরীক্ষা করে দ্রুত রেল পরিষেবা সচল করার প্রচেষ্টা চলছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে রেলবোর্ডের পক্ষ থেকেও।

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষতিপূরণ ঘোষণা, রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি ইতিমধ্যেই নিহত রেলকর্মীর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। এই হামলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরব হয়ে বলেন, ‘‘মাওবাদী দমন করতে যতটা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, রাজ্য সরকার তা নেবে।’’ অপরদিকে, বিরোধীদের দাবি— নিরাপত্তা বলয়ের ফাঁকেই হামলার সুযোগ পেয়েছে মাওবাদীরা।

নাম্বালা কেশবরাওয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ? প্রতিহিংসার রাজনীতি নাকি পরিকল্পিত হামলা?

এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে কি কয়েক মাস আগের সেই মাও নেতা বাসবরাজ ওরফে নাম্বালা কেশবরাওয়ের মৃত্যু? সেনার অভিযানে নিহত হওয়ার পর থেকেই মাওবাদীরা শহিদ সপ্তাহ পালনের ডাক দেয়। তারই অঙ্গ হিসেবে এই বিস্ফোরণ? গোয়েন্দারা বলছেন, এটি নিছক হুমকি নয়— বরং মাওবাদীদের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল।

বন্‌ধের ডাক ছিল পাঁচ রাজ্যে, হাই অ্যালার্টে পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা বাহিনী

৩ অগাস্ট বন্‌ধের ডাক ছিল মাওবাদীদের তরফে। ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তর ছত্তিশগড়, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে ছিল সেই আহ্বান। সেই আগাম বার্তা থাকা সত্ত্বেও ওড়িশায় বিস্ফোরণ ঘটানোয় নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র ও রাজ্য, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে। এরইমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ানো হয়েছে কম্বিং অপারেশন।

Leave a comment