নাসা ক্রু ক্যাপসুল বোয়িং CST-100 স্টারলাইনারকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত গ্রাউন্ডেড (পরিষেবা থেকে বাইরে) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুন ২০২৪-এ প্রযুক্তিগত ত্রুটির পর থেকেই স্টারলাইনার ক্রমাগত আলোচনার মধ্যে ছিল।
Boeing Starliner Grounded: নাসা (NASA) বোয়িংয়ের মহাকাশযান CST-100 স্টারলাইনার (Starliner)-কে ২০২৬ সাল পর্যন্ত গ্রাউন্ডেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি সেই সময়ে আসে যখন জুন ২০২৪-এ স্টারলাইনারের ক্রু ফ্লাইট টেস্টের সময় বড় প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা যায়। নাসার মতে, এই সমস্যাগুলি সম্পূর্ণরূপে মেরামত করতে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মানগুলি পুনরায় পরীক্ষা করতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই কারণে বোয়িং স্টারলাইনারের সমস্ত আসন্ন মিশন স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে।
কি এই Boeing Starliner এর প্রযুক্তিগত সমস্যা?
বোয়িং স্টারলাইনারকে নাসা এবং বোয়িং মানব মিশনগুলির জন্য মহাকাশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করেছিল। কিন্তু জুন ২০২৪-এ ক্রু ফ্লাইট টেস্টের সময় এর সিস্টেমে গুরুতর ত্রুটি দেখা যায়। প্রধান ত্রুটিগুলি যা সামনে এসেছে:
- হিলিয়াম গ্যাস লিক: স্পেসে পৌঁছানোর সময় স্টারলাইনারের সিস্টেমে হিলিয়াম গ্যাসের কয়েকটি জায়গা থেকে লিক হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। হিলিয়াম প্রপালশন সিস্টেমের জন্য জরুরি এবং এর লিক হওয়া মিশনের জন্য বড় ঝুঁকি।
- থ্রাস্ট কন্ট্রোল ফেইলিওর: ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS)-এ ডকিং করার সময় স্টারলাইনারের ২৮টির মধ্যে ৫টি কন্ট্রোল থ্রাস্টার কাজ করা বন্ধ করে দেয়। থ্রাস্টারগুলির ফেইল হওয়া যানটির পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
নাসার সিদ্ধান্ত: কেন নেওয়া হল এত বড় পদক্ষেপ?
নাসা নভোচারীদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার দিয়ে স্টারলাইনারকে খালি অবস্থাতেই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময় স্টারলাইনারে সুনিতা উইলিয়ামস সহ অন্যান্য নভোচারীরা ISS-এ আটকে ছিলেন। তাঁদের পরে নিরাপদে স্পেসএক্স-এর ড্রাগন স্পেসক্রাফটের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।
নাসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, বোয়িং এবং নাসা উভয়ই একসঙ্গে এই প্রযুক্তিগত ত্রুটির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করছে। কিন্তু এই ত্রুটিগুলি সম্পূর্ণরূপে ঠিক করতে বেশ দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
২০২৬ সাল পর্যন্ত কেন থাকবে গ্রাউন্ডেড?
নাসা এবং বোয়িং উভয়ই একসঙ্গে স্থির করেছে যে যতক্ষণ না স্টারলাইনারের সমস্ত সমস্যা সম্পূর্ণরূপে ঠিক করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই যানটিকে কোনো মানব মিশনগুলির জন্য উড়ানের অনুমতি দেওয়া হবে না। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বা ২০২৬ সালের শুরুতে স্টারলাইনারের নতুন পরীক্ষা (Test Flight) করা হবে।
পরের উড়ানে কোনো নভোচারী অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। এটি একটি আনম্যানড টেস্ট মিশন হবে, যাতে এটি পরীক্ষা করা যায় যে উন্নতির পরে স্পেসক্রাফটটি নিরাপদ আছে কিনা। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তবেই এটিকে পুনরায় মানব মিশনগুলির জন্য মঞ্জুরি দেওয়া হবে।
NASA এবং Boeing-এর জন্য কী এই সিদ্ধান্তের মানে?
এই সিদ্ধান্তটি কেবল বোয়িংয়ের জন্য নয়, বরং নাসার ভবিষ্যতের স্পেস মিশনের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। নাসা তার নীতিতে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নভোচারীদের নিরাপত্তার সাথে কোনো আপস করা হবে না। যেখানে বোয়িং স্টারলাইনার প্রযুক্তিগত ত্রুটির সঙ্গে লড়ছে, সেখানে স্পেসএক্স-এর ক্রু ড্রাগন ক্রমাগত সফল মিশন করে চলেছে।
ফলে স্পেসএক্স-এর সাথে নাসার ভরসা আরও মজবুত হচ্ছে। স্টারলাইনারের দেরির কারণে বোয়িংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মহাকাশ ক্ষেত্রে তার প্রতিযোগিতার উপর প্রভাব পড়তে পারে।