চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু ১৫ বছরের নাবালকের, বজবজ শিয়ালদা শাখার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘিরে শোকের ছায়া

চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু ১৫ বছরের নাবালকের, বজবজ শিয়ালদা শাখার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘিরে শোকের ছায়া

চোখের পলকে বিপদ! চলন্ত ট্রেনের সামনে আচমকা চলে এল কিশোর, ঘটনার সাক্ষী বজবজ শাখা

বজবজ শিয়ালদহ শাখার ১৩ নম্বর রেলগেটের কাছে হঠাৎই ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বজবজ ও নুঙ্গি স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় চলন্ত ট্রেনের সামনে আচমকা চলে আসে এক নাবালক। ট্রেনের গতি ছিল যথেষ্ট, আর তার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সে অনেকটা দূরে। চোখের সামনে মুহূর্তে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা হতবাক করে দেয় প্রত্যক্ষদর্শীদের।

দুর্ঘটনার পর রক্তাক্ত কিশোর, ছুটে আসেন স্থানীয়রা, খবর যায় পুলিশে

বিকট আওয়াজে চমকে উঠেছিলেন এলাকাবাসীরা। ট্রেনের হুইসেল আর সঙ্গে তীব্র ধাক্কার শব্দ শুনে ছুটে যান তাঁরা। গিয়ে দেখেন—রেল লাইনের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর পড়ে রয়েছে এক কিশোর। এরপরেই খবর যায় মহেশতলা থানায় ও রেল পুলিশের কাছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ, দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিচয় মিলল কিছুক্ষণের মধ্যেই, পরিবার জানে না কোথায় গিয়েছে ছেলে

মৃত কিশোরের নাম দেবাঞ্জন দত্ত, বয়স মাত্র ১৫। বাড়ি বাটানগর চ্যাটার্জি পাড়া আদর্শ পল্লীতে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবাঞ্জন ছোট থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। রবিবার দুপুর ১:৩০ নাগাদ সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে খোঁজাখুঁজি করেও পরিবারের লোকজন জানতে পারেননি তার অবস্থান।

পুলিশের কাছে গিয়ে মেলে খবর, শনাক্ত করা হয় মৃতদেহ, কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার

অবশেষে সন্ধ্যের দিকে মহেশতলা থানায় গিয়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন ট্রেন দুর্ঘটনার কথা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ শনাক্ত করেন তাঁরা। চোখের সামনে সন্তানকে দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে দেবাঞ্জনের পরিবার। ট্রেনের ধাক্কায় এই করুণ পরিণতি বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউই।

শোকস্তব্ধ আদর্শ পল্লী, প্রতিবেশীদের মুখে শুধু একটাই কথা—'ছেলেটা এমন ছিল না!'

দেবাঞ্জনের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাটানগরের চ্যাটার্জি পাড়ায়। প্রতিবেশীরা বলছেন, “ছেলেটা এমনিতে শান্ত স্বভাবের, যদিও মানসিক সমস্যা ছিল, তাও কখনও এমন হঠকারী আচরণ করেনি।” পরিবার-প্রতিবেশীদের দাবি, ছেলেটি হয়তো অসাবধানতাবশত ট্রেন লাইনের ওপর চলে গিয়েছিল, কোনও আত্মঘাতী উদ্দেশ্য ছিল না।

প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন, রেলগেট এলাকা কেন ছিল এত অনিরাপদ? উঠছে নিরাপত্তা ঘাটতির অভিযোগ

১৩ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই সুরক্ষাহীন বলেই দাবি স্থানীয়দের। তাঁদের প্রশ্ন, “যেখানে এত ট্রেন চলে, সেখানে কেন নেই পর্যাপ্ত গেটম্যান, নেই সুরক্ষা প্রাচীর?” এই ঘটনার পর রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এলাকাবাসীর দাবি, এমন মৃত্যু ভবিষ্যতে রোখার জন্য অবিলম্বে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

১৫ বছরের প্রাণ, কিছু মুহূর্তেই শেষ—অসতর্কতা না প্রশাসনের ব্যর্থতা?

একটি কিশোর প্রাণ হারাল, আর থেকে গেল শুধুই প্রশ্ন। একদিকে পরিবারের অসহায়তা, অন্যদিকে রেলগেটের নিরাপত্তাহীন চেহারা—এই দুইয়ের ফাঁকে চাপা পড়ে গেল এক তরতাজা জীবনের বিদায়। দেবাঞ্জনের মৃত্যু যেন শুধুই একটি 'দুর্ঘটনা' নয়, বরং রেল লাইনের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার এক বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি।

 

Leave a comment