পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ নিজেকে শুধুমাত্র একটি ভোগ্যপণ্য বিক্রয়কারী সংস্থা হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং এটি গ্রাম এবং ছোট শহরগুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক চিত্র পরিবর্তনেও লেগে রয়েছে। কোম্পানির ফোকাস স্থানীয় কৃষক এবং গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের শক্তিশালী করে একটি মজবুত অর্থনৈতিক জাল তৈরি করা।
কোম্পানির দাবি, তারা ভেষজ, শস্য, তেল এবং অন্যান্য কাঁচামাল সরাসরি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে কেনে। এতে শুধু কৃষকরাই ভালো দাম পায় তা নয়, দালালদের ভূমিকাও শেষ হয়ে যায়। হরিদ্বার স্থিত পতঞ্জলি ফুড অ্যান্ড হারবাল পার্ক এই কাজের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যেখানে কৃষকদের সাথে পঞ্চায়েত এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীও যুক্ত রয়েছে।
গ্রামে বাড়ছে রোজগার এবং উৎপাদন
কাঁচামাল গ্রাম থেকে নিয়ে সেটিকে তৈরি পণ্যে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াতে স্থানীয় লোকেরা রোজগার পাচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, টেকনিশিয়ান এবং মহিলা গোষ্ঠী এই পুরো সিস্টেমে কাজ করছে। এতে শুধু গ্রামে আয় বাড়েনি, বরং লোকেরা এখন पलायन-এর পরিবর্তে নিজের গ্রামেই কাজ করতে পছন্দ করছে।
কৃষকদের জন্য 'কৃষাণ সমৃদ্ধি যোজনা'-র লাভ
পতঞ্জলি কৃষকদের জন্য 'কৃষাণ সমৃদ্ধি যোজনা' নামে একটি বিশেষ পরিকল্পনা শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
স্মার্ট মৃত্তিকা পরীক্ষা, আবহাওয়ার তথ্য এবং ফসলের বাজার মূল্যের সাথে সম্পর্কিত ডেটা এখন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এর জন্য কোম্পানিটি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার ফলে কৃষকরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা পাচ্ছে।
MSME-রা পাচ্ছে পুঁজি এবং ট্রেনিং-এর সাহায্য
পতঞ্জলির মডেল শুধু কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কোম্পানি ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগগুলিকে সমর্থন করছে। ইনভয়েসের ভিত্তিতে কার্যকরী মূলধন উপলব্ধ করানো হচ্ছে, যাতে কোনো ছোট ব্যবসায়ী কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই নিজের ব্যবসা বাড়াতে পারে।
এর জন্য পতঞ্জলি কিছু ফিনটেক কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়েছে, যারা MSME-দের ফিনান্সিং সুবিধা দেয়। এই সুবিধার ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা সময় মতো কাঁচামাল কিনতে পারে এবং তাদের পণ্য সময় মতো বাজারে আনতে পারে।
মহিলারা পাচ্ছে স্বরোজগারের সুযোগ
মহিলাদের ক্ষমতায়নেও পতঞ্জলি পিছিয়ে নেই। কোম্পানি গ্রামীণ এবং মফস্বল এলাকার মহিলাদের জৈব চাষের ট্রেনিং দেয়। পাশাপাশি ডিজিটাল টুলস এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে মহিলাদের তাদের পণ্য বিক্রি করতে, দাম নির্ধারণ করতে এবং গ্রাহকের সাথে যুক্ত হওয়ার ট্রেনিং দেওয়া হয়।
অনেক জায়গায় মহিলারা এখন দলবদ্ধ হয়ে ছোট আয়ুর্বেদিক পণ্য তৈরি করছে এবং পতঞ্জলির সাথে পার্টনারশিপ করে সেগুলি বিক্রিও করছে। এতে তারা আত্মনির্ভর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা পেল নতুন প্ল্যাটফর্ম
পতঞ্জলির 'স্বদেশী কেন্দ্র' এবং আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের মতো উদ্যোগ সেই স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরও মঞ্চ দিচ্ছে যারা নিজের ছোট ব্যবসা শুরু করতে চায়।
এই কেন্দ্রগুলি ব্যবসা ছাড়াও প্রশিক্ষণ, পণ্যের তথ্য এবং নেটওয়ার্কিং-এরও কাজ করে। অনেক যুবক এখন নিজের দোকান, ডিস্ট্রিবিউশন ইউনিট এবং ছোট নির্মাণ ইউনিট চালাচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়া গ্রামগুলিতে অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে নতুন শক্তি দিচ্ছে।
দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা এফএমসিজি কোম্পানি হয়ে উঠেছে পতঞ্জলি
পতঞ্জলি আজ ভারতের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকা এফএমসিজি কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম। এর কারণ শুধু পণ্য নয়, এর পেছনের চিন্তা এবং কৌশলও।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে কেন্দ্রে রেখে তৈরি করা এই বিজনেস মডেলটি শুধু পতঞ্জলিকে লাভবান করেনি, বরং গ্রামের লুকানো সম্ভাবনাগুলিকেও সামনে এনেছে।
প্রাকৃতিক পণ্যের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে ভরসা
পতঞ্জলির বিশেষত্ব হল, তারা তাদের পণ্যের প্রচারে ভারতীয়ত্ব এবং প্রাকৃতিতাকে কেন্দ্রে রাখে। তাদের नारा 'প্রকৃতির আশীর্বাদ' শুধু প্রচারের অংশ নয়, বরং এটি তাদের কৌশলের ভিত্তিও।
গ্রামীণ এলাকার লোকেরা পরম্পরাগত ভেষজ এবং দেশীয় চিকিৎসায় ভরসা রাখে। পতঞ্জলি এই ভরসাকেই নিজের ভিত্তি বানিয়ে আয়ুর্বেদিক পণ্যের একটি পুরো শৃঙ্খল তৈরি করে দিয়েছে।
স্থানীয় এবং শহুরে ভারতের মধ্যে কম হচ্ছে দূরত্ব
পতঞ্জলির মাধ্যমে একটি এমন সিস্টেম তৈরি হয়েছে, যা গ্রামীণ এবং শহুরে ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে। গ্রাম থেকে পণ্য তৈরি হয়ে শহর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে এবং শহর থেকে প্রযুক্তি গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে।
এটি একটি উদাহরণ হয়ে উঠছে, যা থেকে অন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং কোম্পানিগুলিও শিক্ষা নিতে পারে যে কিভাবে একটি বিজনেস মডেলের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন আনা যেতে পারে।