খানাকুল-১ নম্বর ব্লকের সেকেন্দারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেন চুপিসারে নেমে এসেছে এক অঘোষিত দুর্যোগ। কানা মুণ্ডেশ্বরী নদীর ওপারে থাকা শিশুদের কাছে স্কুল এখন শুধুই স্মৃতি। নদীর একমাত্র অস্থায়ী সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় এক মাস ধরে ৫০–৬০ জন পড়ুয়া স্কুলে আসতে পারছে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চম্পা মণ্ডল হাজরা রোজ শিশুদের মুখ না দেখে থাকতে পারেন না—এ কথা বলতে বলতেই চোখে জল গড়িয়ে পড়ে তাঁর।
নদী ফুললেই ভেসে যায় স্বপ্ন, পড়ুয়ারা বন্দি বাড়ির উঠোনে
বর্ষায় নদী ফুলে উঠতেই অস্থায়ী সেতু ভেঙে যায়। ফলস্বরূপ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেকেন্দারপুর এলাকার শিশুরা। আর স্কুলে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়ির উঠোনেই বন্দি জীবন কাটছে এখন তাদের। বইয়ের জায়গায় খেলনা, শ্রেণিকক্ষের বদলে কাদামাটি—এইভাবেই ধীরে ধীরে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা।
অভিভাবকদের অসহায়তা: ‘অন্তত একটা নৌকো দিন!’
পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। মৌসুমি বেরা, কাকলি বেরা ও অন্যান্যরা আর্জি জানিয়েছেন, সেতু না হোক, অন্তত একটা নৌকো দিন, যাতে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে। পঞ্চায়েত বা প্রশাসন কেউই কান দেয়নি তাঁদের অনুরোধে। শেষপর্যন্ত টিসি নিয়ে অন্যত্র স্কুলে ভর্তি করার কথাও ভাবছেন তাঁরা।
স্কুলে ১৬৪ পড়ুয়া, কিন্তু ৫০-৬০ জন নেই টানা এক মাস ধরে
বিদ্যালয়ে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৬৪। কিন্তু টানা এক মাস ধরে ৫০–৬০ জন পড়ুয়া অনুপস্থিত। মিড–ডে মিল পাচ্ছে না, পড়াশোনার ধারাবাহিকতা ভেঙে যাচ্ছে, স্কুলের পরিবেশ ক্রমশ ফাঁকা হয়ে পড়ছে। প্রধান শিক্ষিকার ভাষায়, এই ভাবে চললে ওরা হয়তো আর ফিরবেই না। ওদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তো আমাদেরই!
শিশুদের আর্তি: ‘জল কমলে আসব, কিন্তু এখন সাঁতার জানি না!’
স্কুলের ছোট পড়ুয়াদের মধ্যে রূপম বেরা, সুদীপ্ত বেরা ও অদৃতা বেরা জানিয়েছে, “এখন বাড়িতে বসে আছি। স্কুলে যেতে পারছি না। নদীতে জল অনেক, সাঁতার জানি না।” ওদের অনুরোধ, অন্তত একটা ছোট নৌকা হলেও যেন দেওয়া হয়, যাতে তারা আবার স্কুলে ফিরতে পারে।
পঞ্চায়েত-প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: ‘জানি না, এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি’
রামমোহন ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুজিত ঘোষ জানিয়েছেন, আমি এলাম। জানতাম না এমন অবস্থা। এখন দেখছি কী করা যায়। শিক্ষা সঞ্চালক তাপসী ঘোষ জানিয়েছেন, শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাব ব্লকে।
শেষ কথা প্রশাসনিক উদাসীনতার বলি হচ্ছে শিশুরা
একটা ছোট সেতু বা একটি নৌকার অভাবে আজ শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সেকেন্দারপুরের শিশুসমাজ। যেখানে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর কথা, সেখানে কেবলই চোখের জল। প্রশাসনের দৃষ্টি পড়া জরুরি। কারণ, এই শিশুরাই আগামী দিনের ভিত্তি।