ইউপিএসসি প্রার্থী রামকেশ মীনা হত্যাকাণ্ড: লিভ-ইন পার্টনারের ষড়যন্ত্র, ফরেন্সিক জ্ঞান ব্যবহার করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা

ইউপিএসসি প্রার্থী রামকেশ মীনা হত্যাকাণ্ড: লিভ-ইন পার্টনারের ষড়যন্ত্র, ফরেন্সিক জ্ঞান ব্যবহার করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা

দেশের রাজধানীতে ইউপিএসসি প্রার্থী রামকেশ মীনা হত্যাকাণ্ড সারা দেশকে স্তম্ভিত করেছে। এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড ছিল না, বরং সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্র করে ঘটানো একটি জঘন্য ঘটনা ছিল, যার মূল হোতা ছিল তার লিভ-ইন পার্টনার এবং ফরেন্সিক সায়েন্সের ছাত্রী অমৃতা চৌহান।

ক্রাইম নিউজ: তিমারপুরের গান্ধী বিহার এলাকায় ইউপিএসসি ছাত্র রামকেশ মীনা হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে, প্রমাণ লোপাটের জন্য মূল অভিযুক্ত অমৃতা চৌহান তার ফরেন্সিক সায়েন্সের পড়াশোনার পূর্ণ ব্যবহার করেছে এবং মরদেহ সরাতে একাধিক কৌশল অবলম্বন করেছে।

হত্যার আগে অমৃতা তার সঙ্গী সুমিতের সাথে মিলে একাধিক ক্রাইম ওয়েব সিরিজ দেখেছিল, যাতে কোনো ভুল বা প্রমাণের মাধ্যমে ধরা পড়ার কোনো সুযোগ না থাকে। কিন্তু তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনের অবস্থানের মাধ্যমে পুলিশের সামনে উন্মোচিত হয়, যা পুরো হত্যাকাণ্ডের রহস্য ফাঁস করে দেয়।

ইউপিএসসি ছাত্রের মৃত্যু নাকি সুপরিকল্পিত হত্যা?

এই ঘটনাটি দিল্লির তিমারপুরের গান্ধী বিহার এলাকায় ঘটেছিল, যেখানে রাজস্থানের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী রামকেশ মীনা ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি বাড়িতে আগুন লাগার কারণে মৃত্যু বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু ফরেন্সিক তদন্ত সমস্ত সত্য উন্মোচন করে দেয়। তদন্ত অনুযায়ী, অমৃতা চৌহান তার প্রাক্তন প্রেমিক সুমিত কাশ্যপ এবং তার বন্ধু সন্দীপ কুমারের সাথে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৫ অক্টোবর ২০২৫ সালের রাতে অমৃতা আগে থেকেই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিল। রাত প্রায় ৮:৩০টায় সুমিত এবং সন্দীপ সেখানে পৌঁছায়। তিনজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয় এবং তারপর অভিযুক্তরা রামকেশকে মারধর করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর দেহটি বিছানায় শোয়ানো হয়, তারপর তার উপর ঘি ও রিফাইনড তেল ঢালা হয়। ঘরের মোটা মোটা বইগুলোকে একে অপরের উপর রেখে ‘চিতার’ মতো সাজানো হয় এবং মদের একটি পুরো বোতল বইগুলোর উপর ঢেলে দেওয়া হয়।

সুমিত, যে মোরাদাবাদের একজন গ্যাস সরবরাহকারী, সিলিন্ডারের কার্যকারিতা সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল। সে রান্নাঘর থেকে সিলিন্ডার এনে দেহের কাছে রাখে এবং পাইপ খুলে গ্যাস ধীরে ধীরে লিক হতে দেয়। এরপর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে মনে হয় যে বাড়িতে গ্যাস লিকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুজন রাত ২:৫৭টায় ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর ​​আগে তাদের মুখ ঢেকে নেয়। কিছুক্ষণ পরই একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং ফ্ল্যাটটি আগুনের শিখায় ভরে যায়। দমকলের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু ততক্ষণে রামকেশের দেহের অংশগুলো মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল।

তদন্তে ফাঁস হলো রহস্য — ‘দুর্ঘটনা’ নয়, এটি ছিল হত্যাকাণ্ড

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এটিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে মনে করেছিল। কিন্তু যখন ফরেন্সিক দল রান্নাঘরের পরিবর্তে ঘরের মধ্যে সিলিন্ডারের ভাঙা অংশগুলি খুঁজে পায়, তখন সন্দেহ ঘনীভূত হয়।এরপর সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়, যেখানে রাতে দুজনকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে এবং পরে মুখ ঢেকে বাইরে বেরোতে দেখা যায়। এছাড়াও, পুলিশ অমৃতার মোবাইলের অবস্থান ট্র্যাক করে — যা ঘটনার রাতে ফ্ল্যাটের ভিতরে সক্রিয় ছিল। এখান থেকেই তদন্তের মোড় সম্পূর্ণ ঘুরে যায়।

অমৃতা এবং সুমিতের গ্রেপ্তার

যখন পুলিশ অমৃতার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, তখন তার মোবাইল ক্রমাগত বন্ধ আসছিল। ইন্সপেক্টর পঙ্কজ তোমরের দল মোরাদাবাদ এবং দিল্লিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। অবশেষে, ১৮ অক্টোবর অমৃতাকে মোরাদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সমস্ত সত্য বেরিয়ে আসে — হত্যাকাণ্ড, ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ লোপাটের পদ্ধতি সবকিছু। এরপর পুলিশ ২১ অক্টোবর সুমিত কাশ্যপ এবং ২৩ অক্টোবর সন্দীপ কুমারকেও ধরে ফেলে।

ভালোবাসা, সন্দেহ এবং প্রতিশোধের গল্প

পুলিশি তদন্তে উঠে আসে যে অমৃতা এবং রামকেশের দেখা হয়েছিল ২০২৫ সালের মে মাসে। তাদের সম্পর্ক দ্রুত লিভ-ইন সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু পরে অমৃতা জানতে পারে যে রামকেশ তাদের ব্যক্তিগত ভিডিও এবং ছবি হার্ড ডিস্কে সেভ করে রেখেছে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও যখন সে ফাইলগুলো মুছে ফেলেনি, তখন অমৃতা তার প্রাক্তন প্রেমিক সুমিতের কাছে সাহায্য চায়। দুজনেই হত্যার পরিকল্পনা করে এবং এই অপরাধটিকে “দুর্ঘটনা” বলে চালানোর চেষ্টা করে।

হত্যার পর অমৃতা রামকেশের শার্ট পরে সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করে যাতে সন্দেহ কম হয়। এরপর দুজনেই ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়।

Leave a comment