ন্যাশনাল কনফারেন্সে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে: ওমর আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আগা রুহুল্লাহর বিদ্রোহ

ন্যাশনাল কনফারেন্সে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে: ওমর আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আগা রুহুল্লাহর বিদ্রোহ

জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC)-এ রাজ্যসভা নির্বাচনের পর থেকে বিবাদ তীব্র হয়েছে। সাংসদ আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে দলটিকে দুর্বল করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলটিকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে।

জম্মু-কাশ্মীর: জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (National Conference – NC)-এ রাজ্যসভা নির্বাচনের পর থেকে এক বিশাল রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দলের সাংসদ আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মেহেদী মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। রুহুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলকে দুর্বল করার অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেছেন যে, যদি এই পরিস্থিতি বজায় থাকে, তাহলে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

সোমবার রাতে শ্রীনগরে এই বিবাদ আরও গভীর হয়, যখন সাংসদ রুহুল্লাহকে নিয়ে করা একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে তাঁর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। দলের ভেতরের এই টানাপোড়েন এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

মুখ্যমন্ত্রী এবং সাংসদ মুখোমুখি

সাংসদ আগা রুহুল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার সরকারের নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জনগণের অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করছেন না। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন যে, বুডগামে (Budgam) রুহুল্লাহর নির্বাচনী প্রচার থেকে দূরে থাকার কারণে কোনো পার্থক্য হবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থকরাও এই বাগবিতণ্ডায় অংশ নিয়েছেন এবং সাংসদ রুহুল্লাহর পদত্যাগ দাবি করেছেন। দলের ভেতরের এই সংঘাত এখন কেবল রাজনৈতিক মতভেদ নয়, বরং মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

বিবাদের সূত্রপাত যেভাবে

আসলে, আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ ক্রমাগত মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন। তিনি বুডগাম উপনির্বাচন থেকে দূরে থেকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একমত নন। তাঁর বক্তব্য, সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।

রবিবার, রাজৌরি-অনন্তনাগের সাংসদ মিয়াঁ আলতাফও মুখ্যমন্ত্রীকে জনকল্যাণমূলক বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন যে, মিয়াঁ আলতাফ একজন প্রবীণ নেতা, কিন্তু তাঁর তুলনা আগা রুহুল্লাহর সঙ্গে করা যায় না। এই মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়েছে।

সমর্থকদের রাস্তায় বিক্ষোভ

মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির পর রুহুল্লাহর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বান্দিপোরার সোনাবাড়ি, নৌগাম এবং অন্যান্য এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সমর্থকরা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে আগা রুহুল্লাহর সম্মান (respect)-এর বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য বরদাস্ত করা হবে না। বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে এবং দলীয় নেতৃত্বের কাছে রুহুল্লাহর প্রতি সম্মানজনক আচরণের দাবি জানিয়েছে।

ওমর সমর্থকদের পাল্টা জবাব

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিধায়ক আব্দুল মজিদ লারমি বিদ্রোহী সাংসদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন যে, যদি তাঁর মনে হয় মুখ্যমন্ত্রী কিছু করেননি, তাহলে তিনি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করে আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। লারমি বলেন যে, রাজ্যের মর্যাদা (statehood) পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত কোনো বড় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। তাঁর মতে, রাজ্যের অনেক ক্ষমতা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর সব দোষ চাপানো ঠিক নয়।

বুডগাম বিবাদ নিয়ে ওমরের বিবৃতি

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন যে, বুডগাম অঞ্চলে রুহুল্লাহর প্রচার না করার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি মন্তব্য করেন যে, ন্যাশনাল কনফারেন্সে মাটির সঙ্গে যুক্ত অনেক শক্তিশালী নেতা আছেন। মিয়াঁ আলতাফ এবং রুহুল্লাহর তুলনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোথায় মিয়াঁ আলতাফ আর কোথায় আগা রুহুল্লাহ, এই তুলনা আকাশ-পাতালের মতো।”

ওমর আবদুল্লাহ এও বলেছেন যে, যদি বুডগাম পিছিয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য তারাই দায়ী যারা দীর্ঘকাল ধরে সেখানকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর ইঙ্গিত সরাসরি আগা রুহুল্লাহর দিকে ছিল, যিনি ২০০২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বুডগামের বিধায়ক ছিলেন এবং বর্তমানে শ্রীনগরের সাংসদ।

রুহুল্লাহর পাল্টা জবাব

আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মেহেদী ওমর আবদুল্লাহকে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন যে, দলীয় নেতৃত্বকে ব্যক্তিগত অহংকার (ego)-এর ঊর্ধ্বে উঠে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সমস্যা ও প্রত্যাশার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন যে, যদি মুখ্যমন্ত্রী এই বিবাদকে ব্যক্তিগত অহংকারের লড়াইয়ে পরিণত করতে চান, তাহলে তিনিও মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।

রুহুল্লাহ বলেছেন যে, কাশ্মীরের সমস্যাগুলি কেবল রাজনৈতিক নয়, মানবিক (humanitarian)ও বটে। তিনি সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন যে, সংরক্ষণ (reservation)-এর বিষয়ে সরকার নীরব, রাজনৈতিক বন্দিদের (political prisoners) নিয়ে কোনো কথা হয় না, চাকরির অভাব রয়েছে এবং ধর্ম ও সংস্কৃতির ওপর বিপদ looming করছে। তিনি আরও বলেন যে, তিনি বিদ্রোহ করেননি বরং জবাবদিহিতা (accountability) দাবি করেছেন।

Leave a comment