সোনালী বিবিকে ফেরাতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের, ৪ সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরা বাধ্যতামূলক

সোনালী বিবিকে ফেরাতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের, ৪ সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরা বাধ্যতামূলক
সর্বশেষ আপডেট: 7 ঘণ্টা আগে

কলকাতা হাইকোর্ট সোনালী বিবি এবং তার পরিবারকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হোক।

কলকাতা: সম্প্রতি বীরভূমের গর্ভবতী মহিলা সোনালী বিবিকে তার স্বামী এবং আট বছরের ছেলের সাথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের উপর কলকাতা হাইকোর্ট কঠোর মন্তব্য করে এটি বাতিল করেছে। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে সোনালী এবং তার পরিবারকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনা হোক।

চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরানোর নির্দেশ

শুক্রবার বিচারপতি তাপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করে। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে সোনালীকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা চার সপ্তাহের মধ্যে সোনালী, তার স্বামী এবং ছেলেকে ভারতে ফিরিয়ে আনুক। কেন্দ্রীয় সরকার এর আগে এই আদেশ স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছিল, যা হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।

সোনালী বিবি বীরভূমের পাইকারের বাসিন্দা এবং কাজের সূত্রে গত বেশ কয়েক বছর ধরে দিল্লিতে থাকতেন। তিনি তার স্বামী দানিশ শেখ এবং আট বছরের ছেলের সাথে রোহিনী এলাকার সেক্টর ২৬-এ থাকতেন। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি দিল্লিতে গৃহস্থালীর কাজ এবং আবর্জনা কুড়ানোর কাজ করছেন।

গ্রেফতার এবং বাংলাদেশে পাঠানো

সোনালীর পরিবারের দাবি, ১৮ জুন দিল্লির কে.এন. কাটজু মার্গ থানার পুলিশ তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। এরপরে সোনালী এবং আরও পাঁচজনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। সোনালী বর্তমানে নয় মাসের গর্ভবতী, যার ফলে পরিবারে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

বন্দী প্রত্যক্ষণ আবেদন

সোনালীর বাবা হাইকোর্টে বন্দী প্রত্যক্ষণ আবেদন দায়ের করেন। তার আইনজীবী আদালতকে জানান যে সোনালী ভারতের নাগরিক, বাংলাদেশের নন। এই দাবি প্রমাণ করার জন্য জমির কাগজপত্র, তার বাবা ও দাদার ভোটার কার্ড এবং সোনালীর সন্তানের জন্ম প্রমাণপত্র পেশ করা হয়। দিল্লি পুলিশের যুক্তি ছিল যে সোনালীর ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রের অবস্থান

দিল্লি পুলিশ মামলার শুনানি দিল্লিতে করার দাবি জানিয়েছিল কারণ মূল পক্ষগুলি দিল্লি পুলিশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিদেশী আঞ্চলিক নিবন্ধন কার্যালয় দিল্লিতে অবস্থিত। তবে হাইকোর্ট বন্দী প্রত্যক্ষণ আবেদনের শুনানি করে সোনালীকে দ্রুত ভারতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

পরিবার পেল স্বস্তি

হাইকোর্টের আদেশের পর সোনালীর পরিবার বর্তমানে স্বস্তি অনুভব করছে। গর্ভবতী হওয়ার কারণে পরিবারে আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল। এখন সোনালী এবং তার পরিবারের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হওয়ায় অনেক প্রশ্নের সমাধান হয়েছে, যেমন বিদেশে জন্ম নেওয়া শিশুর নাগরিকত্ব এবং ভারতে ফিরে আসার অসুবিধাগুলি।

পরিবার ও স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া

সোনালীর বাবা বলেছেন যে কলকাতা হাইকোর্টের আদেশের জন্য তারা কৃতজ্ঞ। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা তাদের পরিবারকে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে দিল্লি পুলিশ কোনো তদন্ত ছাড়াই সোনালীকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল।

Leave a comment