বিশেষ সিবিআই আদালতে সোমবার বসা শুনানির সময় বিচারক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনভিজ্ঞ বা অবিবেচকের মতো এ ধরণের ত্রুটি কতটা গ্রহণযোগ্য — তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। সংস্থার ভুলবশত অন্য একজন নাগরিককে সমন পাঠানোকে বিচারক সরাসরি ‘অবিবেচনার’ মর্যাদায় আখ্যা দেন।
কেসের পটভূমি — ২০২১ সালের কাঁকুরগাছি হত্যাকাণ্ড
মলাটি শুরু হয় ২০২১ সালের ভোটপরবর্তী উত্তেজনায় কাঁকুরগাছিতে ঘটে যাওয়া বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের হত্যাকাণ্ডের জেরে। ঘটনাটির গুরুত্ব ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা বোঝাতে আদালত ও তদন্তকারীরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নিয়ম বিধান করেন—তাই এমন গোলোযোগি ভুল আরও গুরুতর মনে করা হচ্ছে।
সমনের ভুল পথ — মিন্টা নাকি আরতি?
তদন্তের চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে যে নামটি রয়েছে — মিন্টা, অরফে মিন্টা দাস — সেই ব্যক্তিকেই নোটিস পাঠানো হওয়ার কথা ছিল। অথচ, অভিযোগ বলছে সিবিআই দু’বারই একই ভুল করে আরতি মল্লিক নামে অন্য এক মহিলাকে সমন পাঠিয়েছে। মিন্টা ও আরতি আলাদা দু’জন হলেও কীভাবে এই দ্বৈত ত্রুটি ঘটলো, তা নিয়ে আদালতে তীব্র প্রশ্ন ওঠে।
সমন পাওয়া নারীর বক্তব্য — ‘আমার তো এই মামলায় কোনও যোগ নেই’
আরতির পক্ষে আদালতে তাঁর আইনজীবী ইয়াসিন রহমান বলেন, ক্লায়েন্টকে সমন দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে — অথচ এই মামলায় আরতির কোনও যোগ নেই। তিনি দাবি করেন, তাঁদের ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে কোনো প্রাথমিক প্রমাণই নেই এবং সমন পাঠানো সম্পূর্ণ ভুল ও মানহানিকর।
বিচারকের নির্দেশ — ২২ অগাস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হবে সিবিআইকে
এই অভিযোগ ও ঘটনা শুনে ক্ষমা বা স্থানাপন্ন ভুল মেনে নেওয়া নয়—বিচারক সিবিআইকে নির্দেশ দেন আগামী ২২ অগাস্ট আদালতে মিন্টা দাস সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে। রিপোর্টে কেন বিষয়ভিত্তিক ভুল হয়েছে, নোটিস পাঠানোর পদ্ধতি কেমন ছিল এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়াতে তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে — এসব পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
তদন্তের স্বচ্ছতার ওপর ছায়া; প্রভাব রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও
যে মামলাগুলো ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক সংবেদনশীল, সেখানে তদন্তকারীর ত্রুটিই হলে তা কেবল ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্বের বাইরে রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও আলোড়ন তোলে। তদন্তে এমন ধরেনের জবজাবতি ভুল হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের আস্থা কমতে পারে — এবং মামলার স্বচ্ছতা ও কার্যকর অনুসন্ধান প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
আইনি নিষ্ঠা ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির পার্থক্য জোরালো আলোচনা
আদালতে উঠে আসা প্রশ্নগুলোর মর্ম হল—এই ভুল কি শুধুই প্রশাসনিক ত্রুটি, না কি প্রচলিত প্রক্রিয়ার অবহেলা? নিয়মিত সাইনিং, যাচাই-বাছাই ও ডকুমেন্টেশন নীতিতে কোনো দুর্বলতা আছে কি—সেগুলোই এখন সিবিআইকে রিপোর্টে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
আগামী শুনানির দিকে নজর; আদালত সতর্ক বার্তা দিয়েছেন
২২ অগাস্টের রিপোর্ট জমা ও পরবর্তী শুনানায় সিবিআই কী ব্যাখ্যা নিয়ে উপস্থিত হবে, তা এলাকায় ও আইনি মহলে নজরকাড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচারকের তীব্র কটাক্ষ ইঙ্গিত করে—পরিবর্তন না এলে আদালত সিদ্ধান্তে কঠোর হতে পারে। মামলার প্রকৃত অভিযুক্তের প্রতি ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া চালু রাখতে সবার দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।