কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ আবাসিক মহিলা সংগঠনের ডাকা সাংবাদিক বৈঠক একেবারে গণ্ডগোলে ভেস্তে গেল। ভবানী ভবন ও আলিপুর বডি গার্ড লাইনসের মহিলা সদস্যরা পুলিশের পরিবারকে নিয়ে নানান অভিযোগ প্রকাশ ও প্রতিবাদের বার্তা দিতে এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল প্রসঙ্গ উঠতেই পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে বৈঠক কার্যত ভেঙে যায়।
বছরের পর বছর অপমানের অভিযোগ
রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ আবাসন সমিতির পক্ষে সালমা সুলতানা সরাসরি অভিযোগ তোলেন—গত এক বছর ধরে পুলিশের ওপর লাগাতার অপমান, কটূক্তি ও আক্রমণ চলছে। তাঁর দাবি, নবান্ন অভিযানের দিন বিরোধী দলনেতা কলকাতার নগরপালকে প্রকাশ্যে কটূক্তি করেছিলেন এবং প্রশান্ত সরদারের উপর হামলার ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এতদিন সহ্য করেছি, কিন্তু সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছি।
নবান্ন অভিযানের দিন থেকে ক্ষোভ জমা
সালমা সুলতানা জানান, নবান্ন অভিযানের দিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি পুলিশের পরিবারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, অনুব্রত মণ্ডল একসময় ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং সেই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা রবীন্দ্র সদনে অবস্থান কর্মসূচি করেছিলেন। তদন্ত এখনও চলছে এবং তার অগ্রগতিতে তাঁরা আপাতত সন্তুষ্ট হলেও, রাজনৈতিক নেতাদের মুখের আক্রমণ ও কটূক্তি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ কমেনি।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ক্ষোভের বিস্ফোরণ
সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশের পরিবারের সদস্যরা জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগও তোলেন। তাঁরা বলেন, দেশের সম্মানের প্রতীককে অসম্মান করা হয়েছে, যা কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন তাঁরা। বৈঠকে উপস্থিত বহু সদস্যের বক্তব্যে আবেগ এবং ক্ষোভ স্পষ্ট ফুটে ওঠে।অনুব্রত মণ্ডল প্রসঙ্গ উঠতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত|
তর্ক থেকে গণ্ডগোলে পরিণতি
তর্কাতর্কি এতটাই চরমে ওঠে যে কার্যত প্রশ্নোত্তর পর্ব ভেস্তে যায়। সাংবাদিক বৈঠক যেটি পুলিশের পরিবার ও সমাজের সামনে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি শেষ পর্যন্ত চিৎকার, ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যেই শেষ হয়। অনেকে সভা ছেড়ে চলে যান, আবার কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত থেকে ক্ষোভ উগরে দেন।রাজনৈতিক রং ও জনমতের চাপ
ভবিষ্যতে আরও আন্দোলনের ইঙ্গিত
সালমা সুলতানা এবং অন্যান্য সদস্যরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারের আন্দোলনে নামতে তাঁরা পিছপা হবেন না। জাতীয় পতাকা অবমাননা থেকে শুরু করে পুলিশের উপর রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণ—সব কিছুর বিরুদ্ধে একযোগে সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
ঘটনার তাৎপর্য
মঙ্গলবারের এই ঘটনা শুধু একটি সাংবাদিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি পুলিশের পরিবারের সম্মান ও রাজনৈতিক পরিবেশের টানাপোড়েনের প্রতিফলন। অনুব্রত মণ্ডলের মতো বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রসঙ্গ উঠে আসা মাত্র কেন এইরকম উত্তেজনা ছড়ায়, তা নিয়েও এখন বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।