বিয়ে, রসগোল্লা আর গ্রেপ্তার— শিশু বিবাহের দায়ে এবার খাবার খাওয়া পড়শিও আইনের আওতায়
নাবালিকার বিয়ে হয়েছে মাস দু’য়েক আগে। কেউ প্রতিবাদ করেনি, বরং নিমন্ত্রণ খেয়ে হাসিমুখে ফিরে গেছেন। কিন্তু অতীতের সেই উপস্থিতি আজ হয়ে দাঁড়াল আইনি দায়। হাওড়ার জগাছায় ১৪ বছরের এক কিশোরীর বিয়ের ঘটনায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করা এক প্রতিবেশী, পুরোহিত সহ মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আশ্চর্যের বিষয়— এই প্রতিবেশীই পরবর্তীতে বিয়ের পর হওয়া গার্হস্থ্য হিংসার প্রতিবাদে থানায় ফোন করেছিলেন। তবুও বিয়ে অনুষ্ঠানে থাকার দায়ে তাঁকে-ও ছাড় দেয়নি প্রশাসন।এই অনুচ্ছেদে ঘটনাটির কেন্দ্রীয় নাটকীয়তা ও সামাজিক বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।
অত্যাচারে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ফিরে আসা কিশোরী, বাঁচাতে গিয়েই ফাঁসেন প্রতিবেশী
বিয়ের পর শুরু হয় গার্হস্থ্য হিংসা— মানসিক ও শারীরিক। কিশোরী মেয়েটি আর সহ্য করতে না পেরে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে চুপিচুপি পালিয়ে ফিরে আসে নিজের গ্রামে। ভয় ছিল, পরিবারের লোক আবার জোর করে পাঠিয়ে দেবে সেই একই জায়গায়। তাই এক আত্মবিশ্বাসী প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই শোনা যায় তার ওপর চলা নির্যাতনের কাহিনি। প্রতিবেশী লোকটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে খবর দেন থানায়। পুলিশ এসে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ নেয় এবং তখনই প্রকাশ্যে আসে আরও গুরুতর তথ্য— মেয়েটির বয়স তখনও আঠারো হয়নি।এই অংশে কিশোরীর সাহস এবং প্রতিবেশীর মানবিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে— যা শেষ পর্যন্ত জটিল আইনি পথে গড়ায়।
শুধু বর-কনে নয়, বিবাহবাসরের প্রত্যেক অতিথিই আজ আইনের আওতায়
পুলিশি তদন্তে প্রকাশ— কুলতলির তিরিশ বছরের এক যুবকের সঙ্গে এই বিয়ে হয়েছিল, যা জোর করেই আয়োজিত হয় দুই পরিবারের উদ্যোগে। অনুষ্ঠান হয় রীতিমতো ঘটা করে। কিন্তু এখন সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা পুরোহিত, আত্মীয়স্বজন, এমনকি কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইন বলছে, নাবালিকার বিয়ে ঠেকাতে না পারা মানেই আপনি তা মেনে নিয়েছেন— অর্থাৎ আইন ভেঙেছেন। আর এটাই হাওড়ার পুলিশ কড়া হাতে প্রমাণ করে দিল।এখানে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের ব্যাখ্যা রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা।
‘রসগোল্লা খেলেও অপরাধী!’— সতর্ক বার্তা আইনজীবীদের
হাওড়ার আদালত থেকে ধাপে ধাপে জামিন পেলেও, স্পষ্ট বার্তা দিয়ে চলেছেন আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “নাবালিকার বিয়েতে উপস্থিত থাকা মানে আপনি আইন লঙ্ঘন করেছেন।” শিশুবিবাহ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, প্রমাণিত হলে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কেউ যদি অজুহাত দেখায়—“আমি তো শুধু খেতে গেছিলাম”—তা আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজকে বার্তা দিতে প্রশাসন এখন এমন উপস্থিতিকেও সহানুভূতির চোখে দেখছে না।এই অংশে আইনের কঠোর রূপরেখা ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ তুলে ধরা হয়েছে।
হোমেই এখন ঠাঁই কিশোরীর, জামিনে ধাপে ধাপে মুক্ত অন্যান্য অভিযুক্তরা
বর্তমানে মেয়েটির ঠিকানা হাওড়ার একটি সরকারি হোম। কিশোরীকে নিরাপত্তা ও কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। এদিকে জামিন পেয়েছেন তার স্বামী, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরাও। শুক্রবার হাইকোর্ট জামিন দেয় স্বামীকে, বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েক তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু আইন এখন স্পষ্ট—শুধু বিয়ের সময় উপস্থিত থাকলেই নয়, বিয়ের পরিকল্পনার অংশ হওয়া, মেনে নেওয়া, উপভোগ করাও আইনি অপরাধের সামিল।উপসংহারে ঘটনার পরিণতি ও ভবিষ্যতের সামাজিক প্রতিফলনের দিক তুলে ধরা হয়েছে।