নগদের বস্তা-সংক্রান্ত বিতর্কিত মামলায় সংসদে অপসারণ প্রস্তাবের সম্মুখীন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করে বিচারের আবেদন জানিয়েছেন। বিশেষ বিষয় হল, তিনি এই পিটিশনে নিজের পরিচয় গোপন রেখেছেন।
Justice Verma Supreme Court Petition: বিচার বিভাগ সম্পর্কিত একটি অভূতপূর্ব ঘটনা বর্তমানে সারা দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা, যিনি তাঁর বাসভবনে নগদের বস্তা উদ্ধারের পরে অপসারণ প্রস্তাবের সম্মুখীন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। এই পিটিশনে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রেখে ‘XXX বনাম ভারত সরকার’ শিরোনামে নথি জমা দিয়েছেন।
পিটিশনে তিনি সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করার এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রেরিত সুপারিশ — যেখানে তাঁকে বিচার বিভাগীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে — তা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
'XXX' নাম ব্যবহারের কারণ ও কখন?
সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে ‘XXX’, ‘ABC’, ‘XYZ’ বা অন্যান্য ছদ্মনাম সাধারণত সেই মামলাগুলিতে ব্যবহার করা হয়, যেখানে আবেদনকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ:
- যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ পীড়িতার পরিচয় গোপন করার জন্য
- নাবালক ও কিশোর-কিশোরীদের সাথে জড়িত মামলায়
- বৈবাহিক বিরোধ বা হেফাজত মামলায় শিশুদের পরিচয় সুরক্ষিত রাখার জন্য
- কোনো বিশেষ সংবেদনশীল পদে কর্মরত ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য
সুপ্রিম কোর্ট এর আগেও নির্দেশ দিয়েছে যে, ধর্ষণ বা যৌন অপরাধের সাথে জড়িত পীড়িতার নাম প্রকাশ করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিচারপতি ভার্মা কর্তৃক ‘XXX’ নামটি ব্যবহার করা একটি বিতর্কিত কিন্তু আইনগতভাবে বৈধ পদক্ষেপ বলা যেতে পারে।
পিটিশনে প্রধান দাবিগুলো কী কী?
এই সংবেদনশীল পিটিশনে বিচারপতি ভার্মা সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাবি করেছেন যে: তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাতিল করা হোক। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রেরিত সুপারিশ, যেখানে তাঁকে বিচার বিভাগীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, সেটিও বাতিল করা হোক। সংবিধানের অনুচ্ছেদ 124(4) এর অধীনে তাঁর অপসারণের আগে তাঁকে বিচারিক প্রক্রিয়া এবং গোপনীয়তার পুরো অধিকার দেওয়া হোক।
এই পিটিশনটি 17 জুলাই 2025 তারিখে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রিতে দাখিল করা হয়েছিল। রেজিস্ট্রি কর্তৃক প্রয়োজনীয় ত্রুটি সংশোধনের পরে এটি 24 জুলাই চূড়ান্তভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর শিরোনাম হল ‘XXX বনাম ভারত সরকার’ এবং এটি এই বছর সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা 699তম দেওয়ানি রিট পিটিশন। এই মামলায় কেন্দ্র সরকারকে প্রথম প্রতিবাদী করা হয়েছে, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট স্বয়ং দ্বিতীয় প্রতিবাদী — যা এটিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে।
সমান্তরাল পিটিশন: FIR-এর দাবি
বিচারপতি ভার্মার মামলায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। অ্যাডভোকেট ম্যাথিউস জে নেদুম্পারা কর্তৃক দাখিল করা একটি পৃথক পিটিশনে দাবি করা হয়েছে যে, বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক। এই পিটিশনে বলা হয়েছে যে, তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তা ভর্তি নগদ, তার আগুনে পোড়া এবং তারপর কথিতভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি অপরাধমূলক তদন্ত জরুরি।
আশ্চর্যের বিষয় হল, এই পিটিশনটিও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চের সামনেই তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং শুনানির ক্রমিক সংখ্যা 59-এ থাকবে। যেখানে বিচারপতি ভার্মার পিটিশন ক্রমিক সংখ্যা 56-এ তালিকাভুক্ত। এই ঘটনা বিচার বিভাগে গোপনীয়তা ও স্বচ্ছতার মধ্যে ভারসাম্যের একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।