শ্বশুরবাড়ি থেকে লুকিয়ে ফোন পাঁশকুড়ায় ফের বাল্যবিবাহ কাণ্ড!

শ্বশুরবাড়ি থেকে লুকিয়ে ফোন পাঁশকুড়ায় ফের বাল্যবিবাহ কাণ্ড!
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

শনিবার সকালে পাঁশকুড়ার এক শিক্ষকের মোবাইলে এল একটি অজানা নম্বর। ফোন ধরতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল এক কিশোরী। জড়িয়ে আসা গলায় জানাল—আমি নাইনে পড়ি। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়েছে। স্কুলে যেতে চাই, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেতে দিচ্ছে না। লুকিয়ে ফোন করছি। বাঁচান স্যার, আমি আরও পড়তে চাই।

নাবালিকার আর্তি শুনে দিশেহারা শিক্ষক, স্কুলের সজাগ ভূমিকা

ঘটনাটি একদিনের নয়। কয়েকদিন আগেও স্কুল চলাকালীন সময়ে এক ছাত্রীর বাবা ফোন করে জানান, তাঁর মেয়ে এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে। এক শিক্ষিকা সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন থানায়। পুলিশ তৎপরতায় ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে।

দুই মুখের পূর্ব মেদিনীপুর—উজ্জ্বল ফলাফল আর গভীর অন্ধকার

এই দুই ঘটনাই ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরে, যে জেলাকে রাজ্যের ‘শিক্ষায় অগ্রগামী’ জেলা বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু বাস্তব বলছে, এই জেলারই পাঁশকুড়া মহকুমায় বাল্যবিবাহ মারাত্মক রকমে ছড়িয়েছে। সরকারি প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ কিংবা ‘রূপশ্রী’ও কার্যত প্রতিরোধ করতে পারছে না এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিকে।

সরকারি সমীক্ষায় চোখে আঙুল, বাংলার শীর্ষে বাল্যবিবাহ

২০১৯-২০ সালের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা এবং ল্যানসেট পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ বাল্যবিবাহে শীর্ষে, তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা অন্যতম। জেলার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে পাঁশকুড়ায়।

তিন মাসে দশটি বিয়ে, স্কুলে ফাঁকা বেঞ্চ

সম্প্রতি এক গার্লস হাইস্কুলের তথ্য বলছে, মাত্র তিন মাসে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১০ জন ছাত্রী বিয়ে করে ফেলেছে। বিয়ের পরে তারা আর স্কুলে ফিরছে না। স্কুল কর্তৃপক্ষের সব চেষ্টার পরেও ছাত্রী সংখ্যা কমছে হু-হু করে।

নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে শিক্ষক-শিক্ষিকার লড়াই

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকার কথায়, “অভিভাবকদের ডেকে বোঝানো, পুলিশে খবর দেওয়া, স্থানীয়দের সাহায্য—এই তিনেই নির্ভর করছি।” তবুও, প্রতিরোধের চেষ্টায় প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জ।

অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা, চমকে উঠল প্রশাসন

শুধু পূর্ব নয়, পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকোয়া অঞ্চলেও একই ছবি। সম্প্রতি একসঙ্গে ছ’জন অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার খোঁজ মেলায় থমকে গিয়েছেন ব্লক আধিকারিকরা। জরুরি বৈঠকে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট।

প্রশাসনিক হুঁশিয়ারি, তবুও থামছে না সামাজিক প্রবণতা

জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস জানিয়েছেন, আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক অচেতনতা বড় বাধা। সব গ্রামে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সমাজকর্মীদের আবেদন—সবার এগিয়ে আসা জরুরি

সমাজকর্মী অসীম দাস মনে করেন, কেবল প্রশাসন নয়, সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। কিছু অভিভাবক মেয়ের বিয়ে দিয়েই দায় শেষ করেন। আবার প্রযুক্তির লোভে অনেক নাবালিকা ভুল পথে হাঁটছে।

অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি—বিডিওর মন্তব্য

পাঁশকুড়ার বিডিও অমিতকুমার মণ্ডল বলেন, মোবাইল আসক্তি থেকে পালিয়ে বিয়ে করছে অনেক নাবালিকা। অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। আমরা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিচ্ছি। জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় হতে হবে।

Leave a comment