নীতিশ গড়করির বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার: দূষণ, টোল ট্যাক্স, এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খুললেন

নীতিশ গড়করির বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার: দূষণ, টোল ট্যাক্স, এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খুললেন

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে টোল ট্যাক্স, ট্রোলিং, দিল্লির দূষণ, অবসর এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।

নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দূষণ, টোল ট্যাক্স, ট্রোলিং, হাইওয়ে নির্মাণ, জৈব চাষ, রাজনীতি এবং অবসর জীবন নিয়ে স্পষ্টভাবে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে দিল্লির দমবন্ধ করা বাতাস থেকে মুক্তি পেতে পরিবহন খাতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং টোল ট্যাক্স নিয়ে তৈরি হওয়া মিমগুলিকে তিনি কীভাবে দেখেন।

দূষণ নিয়ে গড়করির উদ্বেগ

গড়করি বলেছেন, দিল্লিতে দূষণের ৪০ শতাংশ আসে পরিবহন খাত থেকে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি বৈদ্যুতিক যান, ইথানল, বায়ো-সিএনজি, এলএনজি, হাইড্রোজেন এবং ফ্লেক্স-ফুয়েলের মতো বিকল্প জ্বালানি প্রকল্প শুরু করেছেন। তিনি আরও জানান, দিল্লি-এনসিআর-এ ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি সড়ক প্রকল্পের কাজ চলছে।

টোল ট্যাক্স নিয়ে ট্রোলিং এবং মিম নিয়ে প্রতিক্রিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ায় টোল ট্যাক্স নিয়ে তৈরি হওয়া মিম প্রসঙ্গে গড়করি বলেন, তিনি এগুলো দেখেছেন এবং 'গদর' ফিল্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি মিম তাঁর সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে জনগণের রাগ বোঝা যায়, তবে সড়ক নির্মাণের জন্য টোল একটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

জৈব চাষে উদ্ভাবন এবং প্রস্রাব থেকে সার তৈরির পরীক্ষা

গড়করি জানান, তিনি তাঁর মালীকে প্রস্রাব দিয়েছিলেন, যা থেকে জৈব সার তৈরি করা হয়েছিল। এই পরীক্ষাটি তিনি ‘ওয়েস্ট টু ওয়েলথ’ অর্থাৎ বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির নীতির অধীনে করেছেন। তিনি বলেন, জৈব চাষকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন কৌশল এবং উদ্ভাবনের উপর কাজ চলছে।

হাইওয়ে নির্মাণে ‘অসম্ভব’কে ‘সম্ভব’ করা

গড়করি তাঁর মেয়াদে প্রতিদিন ১০০ কিলোমিটার হাইওয়ে নির্মাণের লক্ষ্য রেখেছিলেন, যা তিনি 'কঠিন তবে সম্ভব' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে এই সংখ্যাটি গড়ে প্রতিদিন ৩৬-৩৮ কিলোমিটার, যা উন্নত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে।

দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার সুস্পষ্ট নীতি

গড়করি জানিয়েছেন, দেশে মোট ৭২ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১.৫ লক্ষ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক তাঁর মন্ত্রকের অধীনে আসে। যদি কোনো রাস্তার ক্ষতি হয় এবং সেটি তাঁর আওতাভুক্ত হয়, তবে তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বা ঠিকাদারকে জবাবদিহি করেন। তিনি আরও বলেন, ভুল যদি সততার সঙ্গে হয়ে থাকে, তবে ক্ষমা করা হয়, তবে প্রতারণার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া নিশ্চিত।

রাজনৈতিক চিন্তা ও উন্নয়নের অগ্রাধিকার

গড়করি বলেছেন, তাঁর জন্য রাজনীতি সমাজ ও অর্থনীতিতে উন্নতির একটি মাধ্যম। তিনি জানান, তিনি ৯০ শতাংশ সমাজসেবা করেন এবং ১০ শতাংশ রাজনীতি। তাঁর মতে, মন্ত্রী কেবল একটি দলের নন, বরং পুরো দেশের এবং উন্নয়নের রাজনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

টোল সিস্টেম ও রাজস্ব মডেলের প্রয়োজনীয়তা

গড়করি টোল ট্যাক্সের বিষয়ে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, দেশে সড়ক নির্মাণের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা জরুরি। এর জন্য পিপিপি মডেল (Public Private Partnership) গ্রহণ করা হয়েছে এবং সে কারণেই টোল ট্যাক্স আদায় করা হয়। এই ব্যবস্থা রাস্তার গুণমান এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে সহায়ক।

গড়করি জানান, মহারাষ্ট্রের তাঁর অনেক নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো, তবে তিনি সবসময় রাজনীতি ও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে আলাদা রেখেছেন। এই ভারসাম্য তাঁর কার্যশৈলীর একটি অংশ।

অবসরের কোনো পরিকল্পনা নেই

৬৭ বছর বয়সী গড়করি অবসর জীবন নিয়ে বলেন, তাঁর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। যতক্ষণ শারীরিক ক্ষমতা থাকবে, ততক্ষণ কাজ করে যাবেন। তিনি আরও জানান, তিনি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেন না এবং কাজে সম্পূর্ণ ব্যস্ত থাকেন। যখন তাঁকে 'বিকাশ পুরুষ' বলা হয়, তখন গড়করি বলেন, আসল বিকাশ পুরুষ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি আরও বলেন, মোদীর নেতৃত্বে ভারত এমন কাজ করেছে যা কংগ্রেস সরকার ৬০ বছরেও করতে পারেনি।

Leave a comment