চীনের অর্থনীতি মন্দার সম্মুখীন। শিল্প উৎপাদন এবং খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল হয়েছে, সম্পত্তির খাত এবং কর্মসংস্থান সংকট গ্রাহকের ব্যয় হ্রাস করেছে। আগস্টে বেকারত্বের হার ৫.৩% পৌঁছেছে এবং সম্পত্তির বিনিয়োগ ১২.৯% হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিশ্বব্যাপী প্রভাব দেখা যেতে পারে।
চীনের অর্থনীতি সংকটে: চীনের অর্থনীতি গুরুতর সংকটে রয়েছে, যেখানে হ্রাসপ্রাপ্ত ভোগ, দুর্বল বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব মন্দার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আগস্ট ২০২৫-এ শিল্প উৎপাদন ৫.২% এবং খুচরা বিক্রি ৩.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে কম। সম্পত্তির বিনিয়োগ জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১২.৯% হ্রাস পেয়েছে, যখন বেকারত্বের হার ৫.৩% এ পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, গ্রাহকের ব্যয় এবং কর্মসংস্থান উন্নত না হলে এর বিশ্বব্যাপী প্রভাব দেখা যেতে পারে।
খুচরা বিক্রিতে স্থবিরতা
ভোক্তাদের ব্যয়েও হ্রাস দেখা গেছে। আগস্টে খুচরা বিক্রি ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে জুলাইয়ে এটি ছিল ৩.৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছিলেন যে এটি ৩.৯ শতাংশ পর্যন্ত যাবে, কিন্তু পরিসংখ্যান প্রত্যাশার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। সম্পত্তির খাতের মন্দা এবং চাকরির বাজারে স্থবিরতাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বাড়ির দামের ক্রমাগত পতন এবং চাকরির সুযোগের অভাব সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়েছে।
শিল্প উৎপাদনে পতন
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, আগস্ট মাসে শিল্প উৎপাদন মাত্র ৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ে এটি ছিল ৫.৭ শতাংশ। বাজারও এই স্তরের প্রত্যাশা করেছিল, কিন্তু ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। এটি গত বছরের আগস্টের পর থেকে সবচেয়ে ধীর গতি রেকর্ড করেছে। এই বছর চীনে রেকর্ড পরিমাণ গরম এবং দীর্ঘ मानसून উৎপাদন খাতকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
সম্পত্তি খাতে সংকট
চীনের অর্থনীতির একটি বড় অংশ সম্পত্তির খাতের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু এই খাতে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত, গত বছরের তুলনায় সম্পত্তির বিনিয়োগে ১২.৯ শতাংশ পতন এসেছে। নতুন বাড়ির বিক্রিতেও ৪.৭ শতাংশ হ্রাস রেকর্ড করা হয়েছে। আগস্টে বাড়ির দাম মাসে ০.৩ শতাংশ এবং বছরে ২.৫ শতাংশ কমেছে। এই পরিস্থিতি মানুষের আস্থা আরও কমিয়ে দিচ্ছে।
সরকারের উদ্বেগ ও সতর্কতা
চীনের সরকারও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিংহুই বলেছেন যে, অর্থনীতি স্থিতিশীল দেখা গেলেও এতে অনেক অনিশ্চিত এবং অস্থিতিশীল কারণ রয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, বর্তমান সময়ে ম্যাক্রোইকোনমিক নীতিগুলি দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, কর্মসংস্থান, ব্যবসা এবং ভোক্তার আস্থা স্থিতিশীল রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
চাকরির বাজারের পরিস্থিতিও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আগস্টে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার বেড়ে ৫.৩ শতাংশ হয়েছে, যা জুলাইয়ের ৫.২ শতাংশের চেয়ে বেশি। এর মানে হল, চাকরির সুযোগ কমছে এবং তরুণদের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বেকারত্ব বাড়লে ভোক্তা ব্যয় আরও কমে যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও গভীর করবে।
বিশ্বব্যাপী প্রভাবের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, চীনের অর্থনীতির এই স্থবিরতা কেবল অভ্যন্তরীণ স্তরে সীমাবদ্ধ থাকবে না। চীন বিশ্বজুড়ে একটি বড় বাজার এবং সরবরাহ কেন্দ্র। এখানকার বিনিয়োগ এবং ভোগে कमी এর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। বিশেষ করে এশিয়ার বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর চাপ আরও বাড়তে পারে।