চিনে বেজিং এবং তার আশেপাশে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮০,০০০-এর বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি ত্রাণকার্য দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
China Heavy Rains: ভয়ংকর বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত চিন। চিনের রাজধানী বেজিং এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে গত কয়েক দিন ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্যার কারণে বহু রাস্তা ভেঙে গেছে, গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেজিংয়ের মিয়ুন জেলা
বেজিংয়ের মিয়ুন জেলা এই বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া, ইয়ানকিং জেলায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মিয়ুনের বেশ কিছু এলাকায় জলস্তর এতটাই বেড়ে গেছে যে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
৮০,০০০-এর বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে
চিনের সরকারি মিডিয়া এবং সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বেজিংয়ের উত্তরাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে একটানা ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৮০,০০০-এর বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বহু রাস্তা জলের তলায় ডুবে গেছে, যেখানে ১৩৬টি গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
হেবেইতে ভূমিধসের ঘটনা
বেজিংয়ের পার্শ্ববর্তী হেবেই প্রদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সোমবার এখানে ভূমিধসের ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত ৮ জন নিখোঁজ। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে এবং নিখোঁজদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের প্রতিক্রিয়া
চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এই বিপর্যয়কে গুরুতর প্রাণহানির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে দ্রুত ত্রাণকার্য চালানোর এবং মানুষদের সম্ভাব্য সবরকম সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের কড়া নির্দেশ
চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এই দুর্যোগের বিষয়ে অবগত হয়ে কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিখোঁজদের দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে, ত্রাণ শিবিরগুলোতে মানুষদের সুরক্ষিত এবং সুव्यवस्थितভাবে পুনর্বাসন করতে হবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা
বেজিংয়ের স্থানীয় প্রশাসন সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এর আওতায় লোকজনকে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে এবং যেকোনো ধরনের আউটডোর ট্যুরিস্ট অ্যাক্টিভিটি বাতিল করা হয়েছে।
বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে রাস্তার নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধান সড়কগুলোতে জল জমে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ব্রিজ এবং আন্ডারপাস সম্পূর্ণভাবে জলের নিচে ডুবে যাওয়ায় ত্রাণকার্য চালাতে অসুবিধা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
প্রায় ১৩৬টি গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে। মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং যোগাযোগ পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে। প্রশাসন চেষ্টা করছে যাতে জরুরি পরিষেবা যেমন পানীয় জল, খাবার এবং ওষুধ দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।