চীনের ভিক্টরি ডে প্যারেড: পুতিন-কিম-এর উপস্থিতি ও ট্রাম্পের পাল্টা আঘাত

চীনের ভিক্টরি ডে প্যারেড: পুতিন-কিম-এর উপস্থিতি ও ট্রাম্পের পাল্টা আঘাত

চীনের ভিক্টরি ডে প্যারেডে পুতিন ও কিম জং উনের উপস্থিতি। শি জিনপিংয়ের বিবৃতিতে মার্কিন চাপকে অস্বীকার করা হয়েছে, অন্যদিকে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় চীন এবং রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার নৈকট্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Trump: বেইজিংয়ে আয়োজিত China Victory Day Parade 2025 এবার বেশ কয়েকটি কারণে শিরোনামে ছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে বিশেষ করে তোলে। তবে এই প্যারেডের চেয়েও বেশি আলোচিত হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভাষণ, যেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম না নিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে চীন কারও চাপ বা হুমকির কাছে মাথা নত করবে না। এই বার্তা কেবল আমেরিকার জন্যই নয়, বরং সেই সব দেশের জন্যও ছিল যারা চীনের উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই উপলক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকীও পালিত হয়, যা এই আয়োজনকে ঐতিহাসিক করে তোলে।

ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে তোলপাড়

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখে সরাসরি পাল্টা জবাব দেন। ট্রাম্প চীনকে মনে করিয়ে দেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা চীনকে জাপানি আক্রমণ থেকে বাঁচাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি লেখেন যে হাজার হাজার আমেরিকান সৈনিক চীনের স্বাধীনতা ও বিজয়ের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং এই আত্মত্যাগকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ট্রাম্প ব্যঙ্গ করে বলেন যে আশা করা যায় যে চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে এই ঐতিহাসিক অবদানের কথা অবশ্যই স্মরণ করবেন এবং মার্কিন আত্মত্যাগকে সম্মান জানাবেন।

ট্রাম্প এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি তাঁর পোস্টে পুতিন এবং কিম জং উন সম্পর্কেও তীব্র মন্তব্য করেন। তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের জনগণের জন্য এটি একটি বড় দিন, কিন্তু এটা দেখে আকর্ষণীয় লাগছে যে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার নেতারা এই মঞ্চে উপস্থিত আছেন। মনে হচ্ছে আপনারা সকলে মিলে United States-এর বিরুদ্ধে কোনও বড় ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের আমার শুভেচ্ছা জানাবেন।”

পুতিন-কিম উনের উপস্থিতিতে পশ্চিমী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া

চীনের ভিক্টরি ডে প্যারেডে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতাদের উপস্থিতি পশ্চিমী দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এই দুই দেশের উপর আগে থেকেই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় বেইজিংয়ের মঞ্চে পুতিন ও কিমের উপস্থিতি এই বার্তা দিয়েছে যে চীন, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া একটি নতুন কৌশলগত জোটের দিকে এগোচ্ছে। পশ্চিমী মিডিয়া এই অনুষ্ঠানকে Anti-US Bloc অর্থাৎ আমেরিকা-বিরোধী গোষ্ঠী তৈরির পথে আরও একটি পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

শি জিনপিংয়ের বার্তা: চীন কারও চাপে আসবে না

প্যারেডের সময় শি জিনপিং তাঁর ভাষণে বলেন যে চীনের ইতিহাস সাক্ষী যে সে সর্বদা শান্তির পক্ষেই ছিল, কিন্তু কোনও বাহ্যিক চাপ বা হুমকির মুখে নতজানু হবে না। তিনি বলেন যে বিশ্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা শান্তি চায় না সংঘাত। তাঁর এই বক্তব্য পরোক্ষভাবে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের দিকেই নির্দেশিত ছিল, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উপর অর্থনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে।

শি আরও বলেন যে চীনের লক্ষ্য Global Peace এবং উন্নয়ন, কিন্তু যদি কেউ তার সার্বভৌমত্বে চ্যালেঞ্জ জানায় তবে সে পিছিয়ে আসবে না। এই সময় তিনি পুতিন ও কিম জং উনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন যে এশীয় দেশগুলো একসাথে একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, যেখানে বাহ্যিক হস্তক্ষেপের কোনও স্থান থাকবে না।

আমেরিকার অবদানের কথা স্মরণ করালেন ট্রাম্প

ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও লেখেন যে চীনকে ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকাই তাকে জাপানি দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি দিতে সবচেয়ে বড় সাহায্য করেছিল। তিনি লেখেন, “চীনের স্বাধীনতা ও বিজয়ের জন্য অনেক আমেরিকান সৈনিক তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আশা করা যায় এই আয়োজনে তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হবে।” ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে মার্কিন মিডিয়া চীনের কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা হিসেবে দেখেছে।

Leave a comment