দিল্লিতে প্রয়াত ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন। শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। রাজ্যে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ঝাড়খণ্ড: ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন সোমবার দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ৮১ বছর বয়সী শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের রাজনীতিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর শোক প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন যে শিবু সোরেন একজন ভূমিপুত্র নেতা ছিলেন যিনি জনজীবনে অনেক উচ্চতা ছুঁয়েছেন। তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়, দরিদ্র এবং বঞ্চিতদের ক্ষমতায়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ পেয়েছি।
রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া
শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঝাড়খণ্ড সহ গোটা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন দলের নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর প্রয়াণ শুধু ঝাড়খণ্ডের রাজনীতির জন্য নয়, আদিবাসী অধিকারের কণ্ঠস্বরও হারাল।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু এবং সংগ্রাম
শিবু সোরেন ১৯৪৪ সালের ১১ জানুয়ারি বিহারের হাজারিবাগ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের অন্তর্গত। তিনি 'দিশম গুরু' এবং 'গুরুজি' নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি আদিবাসী সমাজের অধিকারের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন এবং আদিবাসী অঞ্চলে শোষণের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছেন।
১৯৭০-এর দশকে তিনি আদিবাসী অধিকার রক্ষার জন্য সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কিন্তু জিততে পারেননি। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘকাল সংসদে ঝাড়খণ্ডের কণ্ঠস্বর ছিলেন।
ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা
শিবু সোরেনের সবচেয়ে বড় অবদান ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনে। বিহার থেকে আলাদা হয়ে ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড গঠিত হয় এবং এই ঐতিহাসিক আন্দোলনে শিবু সোরেনের ভূমিকা ছিল নির্ণায়ক। তিনি গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আদিবাসী সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাঁর দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক পরিচিতিকে শক্তিশালী করেছে।
তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তবে মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি
শিবু সোরেন তিনবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। প্রথমবার ২০০৫ সালে, দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালে এবং তারপর ২০০৯ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান। তবে, তিনি কোনোবারই তাঁর মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর গভীর প্রভাব ছিল।
সার্বजनिक জীবনে সততা ও নিষ্ঠা
শিবু সোরেনকে তাঁর সমর্থকেরা এমন একজন নেতা হিসেবে স্মরণ করেন যিনি সরাসরি জনগণের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। তিনি সবসময় ভূমি স্তরের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলেন। আদিবাসী সমাজ, জঙ্গল-পাহাড়ের অধিকার এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার জন্য তিনি নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন।
হেমন্ত সোরেনের জন্য আবেগপূর্ণ মুহূর্ত
শিবু সোরেনের মৃত্যুর সময় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "শ্রদ্ধেয় দিশম গুরুজি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন। আজ আমি শূন্য হয়ে গেলাম।" এই সময়টি তাঁর জন্য ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ।
শিবু সোরেনকে শ্রদ্ধা জানাতে শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ড নয়, জাতীয় স্তরের নেতারাও শামিল হয়েছেন। কংগ্রেস, বিজেপি, বাম দল এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতারা তাঁকে সামাজিক ন্যায়বিচার ও আদিবাসী অধিকারের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।