দিল্লির আনন্দ পর্বত: প্রতিশোধের বলি ৪ বছরের শিশু, ১৫ বছরের নাবালকের হাতে নির্মম খুন

দিল্লির আনন্দ পর্বত: প্রতিশোধের বলি ৪ বছরের শিশু, ১৫ বছরের নাবালকের হাতে নির্মম খুন

দিল্লির আনন্দ পর্বত এলাকায় ১৫ বছর বয়সী এক নাবালক চার বছরের নিষ্পাপ হর্ষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অভিযুক্ত তাকে একটি পাথর থেকে ফেলে এবং পাথর দিয়ে আঘাত করার পর ছেড়ে দেয়। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

নয়াদিল্লি: দিল্লির আনন্দ পর্বত এলাকায় ১৫ বছর বয়সী এক নাবালক প্রতিবেশী চার বছরের নিষ্পাপ হর্ষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অভিযুক্ত শিশুটিকে রামজাস পার্কে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তার ঘাড় ও হাত ভেঙে দেয়, তারপর প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচু একটি পাথর থেকে নিচে ফেলে দেয় এবং পাথর দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে। এই ঘটনা এলাকার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে এবং পুরো পাড়ায় ক্ষোভ ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার গুরুতরতা স্থানীয় প্রশাসনকেও সতর্ক করে তোলে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে এবং আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে। তদন্ত চলাকালীন জানা যায় যে, অভিযুক্তের হর্ষকে প্রলোভন দেখিয়ে রামজাস পার্কে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য পূর্বপরিকল্পিত ছিল।

হর্ষকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মারধর ও ফেলে দেওয়া হয়

পুলিশ জানিয়েছে, হর্ষ টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল এবং বাড়ির বাইরে খেলছিল। তখনই প্রতিবেশী নাবালক তাকে প্রলোভন দেখিয়ে রামজাস পার্কের জঙ্গল মতো এলাকায় নিয়ে যায়। পার্কে পৌঁছে অভিযুক্ত শিশুটির হাত ও ঘাড় ভেঙে দেয়।

এরপর অভিযুক্ত শিশুটিকে ৩০ ফুট উঁচু একটি পাথর থেকে নিচে ফেলে দেয়। যখন শিশুটির অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং সে চিৎকার করতে শুরু করে, তখন অভিযুক্ত পাথর তুলে শিশুটির মাথা ও মুখে একাধিকবার আঘাত করে। গুরুতর আহত হর্ষকে সেখানেই ফেলে রেখে অভিযুক্ত বাড়ি ফিরে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নাবালকের গ্রেফতার 

হর্ষ দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় তার মা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়, যেখানে হর্ষকে অভিযুক্ত নাবালকের সাথে পার্কের দিকে যেতে দেখা যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে নাবালককে আটক করে এবং তার দেখানো স্থানে গুরুতর অবস্থায় হর্ষকে পার্ক থেকে উদ্ধার করে।

শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাতভর ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, কিন্তু মাথায় গুরুতর আঘাত এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হর্ষের মৃত্যু হয়। পুলিশ নাবালকের বিরুদ্ধে ধারা ১৩৭(২) (অপহরণ) এবং ১০৩(২) (হত্যা) এর অধীনে মামলা দায়ের করেছে।

প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে হর্ষকে হত্যা

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হর্ষের বাবা অভিযুক্ত নাবালকের বাবার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে তার ছেলেকে বাড়ির মালিকের বাইক চুরি করতে দেখা গেছে। এরপর অভিযুক্তের বাবা তাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন।

এই ঘটনাই নাবালকের মনে রাগ এবং প্রতিশোধের জন্ম দেয়। সে পরিকল্পিতভাবে হর্ষকে প্রলোভন দেখিয়ে পার্কে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করে। পুলিশ জানিয়েছে, এত কম বয়সে এমন হিংসাত্মক অপরাধ উদ্বেগজনক।

হিংসাত্মক ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক

এই নৃশংস ঘটনা পুরো পাড়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ হতবাক যে, শুধুমাত্র একটি থাপ্পড়ের জন্য কেন একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন নেওয়া হলো। প্রতিবেশীরা জানায় যে, অভিযুক্ত ছেলেটি আগেও ঝগড়া করত এবং তার আচরণ প্রায়শই খারাপ ছিল।

অতিরিক্ত ডিসিপি সেন্ট্রাল ঋষি কুমার জানিয়েছেন যে, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলার তদন্ত চলছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে, নাবালকের মধ্যে এমন হিংসাত্মক প্রবণতা কিভাবে তৈরি হলো এবং অন্যান্য ঘটনায় তার এই প্রবণতার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা। প্রশাসন আরও আশ্বাস দিয়েছে যে, এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হবে এবং শিশুদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ নজর রাখা হবে।

Leave a comment