দিল্লিতে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি

দিল্লিতে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি

সুপ্রিম কোর্ট দিল্লিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছে। আদালত DERC-কে একটি স্বচ্ছ পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপানোর নির্দেশ দিয়েছে। এখন সবার চোখ নতুন দাম ঘোষণা এবং ভর্তুকির উপর সম্ভাব্য প্রভাবের দিকে।

৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট দিল্লির বিদ্যুতের দাম নিয়ে একটি বড় রায় দিয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে সীমিত এবং সাশ্রয়ী সীমার মধ্যে দাম বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আদালত দিল্লি ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (DERC)-কে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা যেন এই বৃদ্ধির জন্য একটি স্বচ্ছ পরিকল্পনা তৈরি করে, যাতে সাধারণ গ্রাহকদের উপর বেশি চাপ না পড়ে। আদালতের এই রায় কোম্পানিগুলোর ক্রমবর্ধমান খরচ এবং বহু বছর ধরে স্থির থাকা দামের কথা বিবেচনা করে এসেছে।

DERC-কে বিস্তারিত প্ল্যান দিতে হবে

সুপ্রিম কোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে যে DERC-কে এখন একটি স্পষ্ট এবং বিস্তারিত কাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে কখন, কীভাবে এবং কোন স্তরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। আদালতের বক্তব্য হল, এই পরিকল্পনা স্বচ্ছ হতে হবে এবং জনগণের স্বার্থ মাথায় রেখেই দাম পরিবর্তন করতে হবে।

বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছিল

দিল্লিতে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজ করা কোম্পানিগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে দাম বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ট্রান্সমিশন এবং বিতরণের খরচ ক্রমাগত বাড়ছে, যার ফলে বর্তমান রেটে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কোম্পানিগুলোর দাবি, বর্তমান দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

রেগুলেটরি কমিশন আগে আবেদন খারিজ করেছিল

বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর এই দাবি প্রথমে দিল্লি ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন খারিজ করে দিয়েছিল। DERC-এর বক্তব্য ছিল যে গ্রাহকদের পকেটে অতিরিক্ত বোঝা চাপানো যায় না। এছাড়াও, যেকোনো ধরনের বৃদ্ধির আগে ব্যাপক পর্যালোচনার প্রয়োজন। কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কমিশনকে আবার এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।

বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে

দিল্লি সরকার বর্তমানে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়, যা ঘরোয়া গ্রাহকদের ভর্তুকি হিসাবে দেওয়া হয়। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের পুরো খরচ সরকার বহন করে। এর পরে, ব্যবহার বাড়লে প্রতি ইউনিটের হিসেবে চার্জ লাগে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে এখন দেখার বিষয়, এই ভর্তুকি প্রকল্প আগের মতো চলবে নাকি এতেও পরিবর্তন করা হবে।

বিতরণ কোম্পানিগুলো স্বস্তি পেতে পারে

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেকটা স্বস্তি পেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হওয়া কোম্পানিগুলো দাম বাড়ার পরে ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেতে পারে। কোম্পানিগুলোর যুক্তি, ক্রমবর্ধমান খরচ দেখলে দাম বাড়ানো এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

DERC-এর নতুন পরিকল্পনার অপেক্ষা

এখন সবার নজর DERC-এর দিকে যে তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কেমন পরিকল্পনা পেশ করে। কমিশনকে এটা স্থির করতে হবে যে কোন শ্রেণীর গ্রাহকদের উপর কতটা বোঝা চাপানো হবে এবং কোন বর্গকে কতটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এটাও দেখা হবে যে ভর্তুকি পাওয়া গ্রাহকদের দামের পরিবর্তনে ছাড় দেওয়া হবে কিনা।

বিদ্যুতের দাম নিয়ে সবসময় দিল্লির রাজনীতিতে আলোড়ন থাকে। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প দিল্লি সরকারের প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে বিরোধী এবং শাসক দলের মধ্যে এই ইস্যু নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হতে পারে। যদিও, এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

বিদ্যুতের বর্তমান দাম এবং স্ল্যাব

বর্তমানে দিল্লিতে ঘরোয়া গ্রাহকদের জন্য ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এর পরে ২০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত খরচের উপর ৪.৫ টাকা প্রতি ইউনিট হিসেবে বিল হয়। ৪০০ ইউনিটের বেশি খরচ হলে দাম বাড়তে থাকে। এখন যদি দাম বাড়ে, তাহলে এই স্ল্যাবগুলোও পরিবর্তন করা হতে পারে অথবা প্রতি ইউনিটের চার্জে পরিবর্তন হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও, আপাতত গ্রাহকদের নতুন দামের প্রভাব দেখার জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। DERC-কে এখন আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিস্তারিত প্রস্তাব তৈরি করে জনসমক্ষে আনতে হবে, যার পরে নতুন দাম কার্যকর করা হবে।

Leave a comment