শেষ ভিডিও পোস্ট করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে আত্মঘাতী দিল্লির যুবক বিকাশ। ঘটনায় ফের আলোচনায় অতুল সুভাষের মৃত্যুর স্মৃতি।দিল্লির নিহাল বিহার এলাকার বাসিন্দা, ৩২ বছর বয়সি বিকাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন ভিডিয়ো পোস্ট করে আত্মহত্যা করেন। ভিডিয়োতে স্ত্রীকে একাধিক অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জীবন শেষ করার কথা জানান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনায় সারা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
স্ত্রীর ‘প্রেমিক’ সাকিবের নাম, সম্পর্কের অভিযোগ
স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সাকিব নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরব হলেন বিকাশ। ভিডিয়োতেই সব বললেন তিনি।বিকাশ দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী চার বছরের সন্তানকে নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যান, এবং এক সাকিব নামে ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, সাকিবের বিরুদ্ধে সাইবার প্রতারণার অভিযোগও তুলেছেন বিকাশ। ভিডিয়োতে তিনি বলেন, এই সম্পর্ক তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।
স্ত্রীর পাশে না থাকার অভিযোগ, ঋণে জর্জরিত বিকাশ
বিপুল ঋণের বোঝা মাথায়, কিন্তু স্ত্রী পাশে না থাকায় একাকীত্বে ভেঙে পড়েন তিনি। ভিডিয়োতে উঠে এল আর্থিক চাপের কথাও।বিকাশ বলেন, তিনি প্রচণ্ড আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর উপর বহু টাকার ঋণের বোঝা ছিল। তা সত্ত্বেও স্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়াননি। বরং, তিনি অভিযোগ করেন, এই সময়েও স্ত্রী সম্পর্ক তৈরি করেন অন্য কারোর সঙ্গে, যা তাঁর জীবন আরও দুর্বিষহ করে তোলে।
সন্তানের হেফাজতের আর্জি, স্ত্রীকে অযোগ্য বলে দাবি
শেষ ইচ্ছে হিসাবে ছেলের হেফাজত নিজের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ রেখে গেলেন বিকাশ। স্ত্রীর আয় না থাকাও তির্যক মন্তব্যে তুলে ধরেন।ভিডিয়োতে বিকাশ স্পষ্ট বলেন, তিনি চান না তাঁর সন্তান স্ত্রীর কাছে থাকুক। বরং ছেলেকে যেন তাঁর বাবা-মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, স্ত্রী কর্মক্ষম নন, কোনও স্থায়ী আয়ও নেই। এই বক্তব্যে তাঁর বিষণ্ণতা এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নিজের দোষও স্বীকার, স্ত্রীর উপর মদ্যপ অবস্থায় নির্যাতনের কথা
একতরফা দোষারোপ নয়—নিজের ভুলও মানলেন বিকাশ। বললেন, মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে হেনস্থা করেছেন তিনিও।ভিডিয়োর এক পর্যায়ে বিকাশ বলেন, তিনি নিজেও নির্দোষ ছিলেন না। মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীর উপরে তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন—এই স্বীকারোক্তি দেন তিনি। এই বক্তব্যে বোঝা যায়, সম্পর্কের টানাপোড়েন দুই তরফেই গভীর ছিল।
ভিডিওর কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ
ভিডিয়ো পোস্টের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উদ্ধার হয় বিকাশের ঝুলন্ত দেহ, পুলিশের সন্দেহ আত্মহত্যার দিকেই।ভিডিয়োটি ভাইরাল হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই পুলিশ বিকাশের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ আত্মহত্যার সম্ভাবনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিকাশের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
অতুল সুভাষের মৃত্যুর প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসছে
এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছে বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ার অতুল সুভাষের মৃত্যুর কথা, যেখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল।গত বছর, বেঙ্গালুরুর ইঞ্জিনিয়ার অতুল সুভাষ আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনিও স্ত্রী নিকিতা সিংহানিয়ার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। দিল্লির বিকাশের ঘটনাও সেই চিত্রনাট্যকেই যেন নতুন করে ফিরিয়ে আনল—নেটদুনিয়ায় এখন দুই ঘটনার তুলনা চলছে।