মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে ভারতকে স্বস্তি দিয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ছাড়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে। এর ফলে ভারতের সংস্থা আইপিজিএল (IPGL) শহীদ বেহেশতি টার্মিনাল পরিচালনা চালিয়ে যেতে পারবে। এই পদক্ষেপ ভারতকে পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও মানবিক সরবরাহ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
Port project: চাবাহার বন্দর প্রকল্পে ভারত বড় স্বস্তি পেয়েছে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে প্রাপ্ত ছাড়ের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এর ফলে ভারতের সরকারি খাতের সংস্থা ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড (IPGL) ইরানের শহীদ বেহেশতি টার্মিনাল পরিচালনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতকে পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে মানবিক সহায়তা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম মসৃণভাবে চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। একই সাথে, এটি এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের একটি কৌশলগত বিজয় হিসাবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত ও ইরানের অংশীদারিত্ব জোরদার হলো
চাবাহার বন্দর ভারত ও ইরানের মধ্যে সহযোগিতার প্রতীক। এটি ইরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি গভীর সমুদ্রের বন্দর, যা ভারতকে আরব সাগরে সরাসরি প্রবেশাধিকার দেয়। এর বিশেষত্ব হল যে এটি পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে একটি বিকল্প বাণিজ্য পথ সরবরাহ করে।
২০২৪ সালে ভারত ও ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের সংস্থা আইপিজিএল (IPGL) এই বন্দরের শহীদ বেহেশতি টার্মিনাল পরিচালনা করে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হল বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্যিক পথের উন্নতি এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি করা।
মার্কিন ছাড়ে সহজ হলো পরিচালনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত এই ছাড় ভারতের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে এনেছে। ইরানের উপর দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে, যার প্রভাব সেখানকার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে, এই ছাড় ভারতকে চাবাহার প্রকল্পে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
সিএনএনের (CNN) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত ভারতকে আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে তার বাণিজ্যিক ও মানবিক মিশনগুলি চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ভারত চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তানে গম, ঔষধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে। এই পথটি পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পথের একটি বিকল্প, যা প্রায়শই রাজনৈতিক কারণে অবরুদ্ধ থাকে।
চাবাহার: এশিয়ার সাথে ভারতের যোগাযোগের পথ

চাবাহার বন্দর শুধু বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, এটি ভারতের কৌশলগত নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বন্দরটি ভারতের "কানেক্ট সেন্ট্রাল এশিয়া" (Connect Central Asia) দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংযুক্ত, যার অধীনে ভারত মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে তার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।
এই বন্দরটিকে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (INSTC)-এর সাথেও যুক্ত করা হচ্ছে। এটি একটি বৃহৎ বহু-দেশীয় বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক, যা ভারত, ইরান, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়াকে সংযুক্ত করে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভারত ইউরোপ ও রাশিয়াতে পণ্য পাঠানোর জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, সস্তা এবং দ্রুত পথ পাবে।
চীনের প্রভাবের জবাব
ভারতের জন্য চাবাহার বন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়, কারণ চীন পাকিস্তানের গ্বাদার বন্দরে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। গ্বাদার বন্দর চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অংশ এবং এটিকে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (CPEC) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে, চাবাহার বন্দর ভারতকে কৌশলগতভাবে একটি শক্তিশালী বিকল্প সরবরাহ করে। এটি কেবল চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে সাহায্য করে না, বরং ভারতকে পশ্চিম এশিয়া ও মধ্য এশিয়াতে তার উপস্থিতি বজায় রাখার সুযোগও দেয়।
আফগানিস্তান ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় সহায়ক
আফগানিস্তানের মতো একটি স্থলবেষ্টিত দেশের জন্য চাবাহার বন্দর জীবনরেখার মতো প্রমাণিত হচ্ছে। ভারত এই বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তানে নিয়মিত খাদ্যশস্য ও মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে। এই পথে পণ্য সরবরাহ করা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি সহজ এবং স্থিতিশীল।
চাবাহারের পরিচালনার ফলে কেবল ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কই মজবুত হয়নি, বরং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ভারতের জন্য দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে একটি সেতুর মতো কাজ করছে।
 
                                                                        
                                                                             
                                                












