মালয়েশিয়ায় জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক: নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারে আলোচনা

মালয়েশিয়ায় জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক: নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারে আলোচনা

ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মালয়েশিয়ায় ASEAN শীর্ষ সম্মেলনের সময় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এবং মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী মোহাম্মদ হাজী হাসানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। উভয় বৈঠকে কৌশলগত অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য, শিক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়।

ASEAN শীর্ষ সম্মেলন: ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মালয়েশিয়ায় চলমান দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিসমূহের জোট (ASEAN) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পৌঁছেছেন। এই সময়ে তিনি ASEAN শীর্ষ সম্মেলন ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এবং মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী মোহাম্মদ হাজী হাসানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য হল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনের সঙ্গে বৈঠকের সময় জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। বৈঠকে উভয় নেতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশ (free and open Indo-Pacific) বজায় রাখার উপর জোর দেন। বিদেশ মন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ জানান যে, উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। এই বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।

মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা

এস জয়শঙ্কর মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী মোহাম্মদ হাজী হাসানের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যাকে তিনি 'উষ্ণ অভ্যর্থনাপূর্ণ সাক্ষাৎ' বলে বর্ণনা করেছেন। বৈঠকে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় অর্জিত অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে। জয়শঙ্কর মিয়ানমারের পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা (regional stability) নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি হাসানকে ASEAN এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনগুলোর সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছাও জানান। বৈঠকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়েও কথা হয়।

মালয়েশিয়ার ASEAN শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন

মালয়েশিয়া বর্তমানে ASEAN-এর সভাপতি দেশ। কুয়ালালামপুরে আয়োজিত বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে ১১টি সদস্য দেশ ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, চীন, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো ডায়ালগ পার্টনাররাও অন্তর্ভুক্ত। এই সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনা হয়। এস জয়শঙ্করের বৈঠকগুলো ASEAN শীর্ষ সম্মেলনের মূল এজেন্ডা থেকে ভিন্নভাবে, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং কৌশলগত বিষয়গুলোর উপর ফোকাস করার জন্য আয়োজিত হয়েছিল।

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকে

বৈঠকগুলোর সময় ভারত নিউজিল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব (strategic partnership) জোরদার করার উপর জোর দেয়। এতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা (maritime security), উচ্চ প্রযুক্তি শিল্প এবং শিক্ষার উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নতুন দিকগুলি নিয়েও আলোচনা হয়। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং শক্তি নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করে।

আঞ্চলিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা

জয়শঙ্কর উভয় বৈঠকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বিশেষ করে মিয়ানমার এবং অন্যান্য সংকটপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। তিনি শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের (peace, stability, development) গুরুত্বের উপর জোর দেন। মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রী ভারতের আঞ্চলিক অবদানের প্রশংসা করেন এবং উভয় দেশ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর সংকল্প নেয়।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি

এস জয়শঙ্কর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের ভূমিকা এবং সহযোগিতার দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন যে ভারত এই অঞ্চলে সমস্ত দেশের জন্য বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। নিউজিল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক (strategic engagement) আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

Leave a comment