দিল্লিতে যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে। প্রশাসন নীচু এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
Delhi Flood: দিল্লিতে আবারও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীর জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে এবং এটি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। হরিয়ানার হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার পর প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গত বছর ২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতি আবারও তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে ক্রমাগত জল ছাড়া হচ্ছে
হরিয়ানার হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার প্রক্রিয়া শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২,৭১,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এরপর সকাল ৮টা পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে ৩,১১,০৩২ কিউসেক এবং সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩,২৯,৩১৩ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল দিল্লিতে পৌঁছাতে প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ ঘন্টা সময় লাগে। এর অর্থ হল আগামী দুই দিনে যমুনার জলস্তর আরও বাড়তে পারে।
যমুনার জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করেছে
রবিবার পুরনো রেল ব্রিজে যমুনা নদীর জলস্তর ২০৫.৫২ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটি বিপদসীমা ২০৫.৩৩ মিটারের চেয়ে বেশি। দিল্লিতে সতর্কীকরণ স্তর (warning level) ২০৪.৫ মিটার, বিপদসীমা (danger level) ২০৫.৩ মিটার এবং ২০৬ মিটার পার হলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়।
অর্থাৎ, জলস্তর ২০৬ মিটার পর্যন্ত পৌঁছালে নীচু এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
পূর্ববর্তী বছরের রেকর্ড এবং বর্তমান আশঙ্কা
দিল্লিতে যমুনার জলস্তর আগেও বেশ কয়েকবার রেকর্ড ভেঙেছে।
- ১৯৭৮ সালে ৭ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল, তখন জলস্তর ২০৭.৪৯ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
- ২০১০ সালে ৭,৪৪,৫০৭ কিউসেক জল ছাড়ার পর জলস্তর ২০৭.১১ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
- ২০১৩ সালে ৮,০৬,৪৬৪ কিউসেক জল ছাড়ার পর জলস্তর ২০৭.৩২ মিটার পর্যন্ত গিয়েছিল।
- ২০২৩ সালে ৩,৫৯,৭৬০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল, যার ফলে জলস্তর ২০৮.৬৬ মিটার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
- এখন ২০২৫ সালে আবারও লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার পর এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে ২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতি আবারও তৈরি না হয়।
নীচু এলাকার বাসিন্দারা সতর্ক
প্রশাসন দিল্লির নীচু এলাকার বাসিন্দাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছে। দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে, ময়ূর বিহার এবং কালিंदी কুঞ্জ-এর মতো এলাকায় অস্থায়ী তাবু স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এখানকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হবে।
কেন্দ্রীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে সমস্ত সংস্থাগুলিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে এবং যেকোনো জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
গত বছর ২০২৩ সালে যখন হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে ৩.৬ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল, তখন দিল্লির অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। রাস্তায় জল জমে গিয়েছিল এবং হাজার হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করতে হয়েছিল।
প্রশাসনের প্রস্তুতি ও সতর্কতা
দিল্লি প্রশাসন জানিয়েছে যে পরিস্থিতির উপর নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। দিল্লিতে সতর্কীকরণ স্তর, বিপদসীমা এবং সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্তর বিবেচনা করে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদি জলের স্তর আরও বাড়ে, তবে উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। নীচু এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের কাছে আবেদন করা হচ্ছে যেন তারা প্রশাসনের নির্দেশাবলী মেনে চলেন এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
আগামী ৪৮ ঘন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
আবহাওয়া দপ্তর এবং প্রশাসন উভয়েরই মতে, আগামী ৪৮ ঘন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হস্তিনাকুন্ড ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল দিল্লিতে পৌঁছাতে প্রায় দুই দিন সময় লাগে। এই সময়ে যদি বৃষ্টিপাত বাড়ে, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।