দেবোত্থান একাদশী ২০২৫: ব্রত পালনে কোন কাজগুলি ভুলেও করবেন না, জেনে নিন নিয়ম

দেবোত্থান একাদশী ২০২৫: ব্রত পালনে কোন কাজগুলি ভুলেও করবেন না, জেনে নিন নিয়ম

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালে দেবউথান একাদশী বা দেবোত্থান একাদশীর ব্রত ১ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার পালিত হবে। এই তিথি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত হয়, কারণ এই দিন ভগবান বিষ্ণু তাঁর চার মাসের যোগনিদ্রা থেকে জাগেন এবং পুনরায় সৃষ্টির কাজ পরিচালনা করেন। এরই সঙ্গে চাতুর্মাসের সমাপ্তি ঘটে এবং বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, মুণ্ডন সহ সমস্ত শুভ কাজ শুরু হয়।

Devuthani Ekadashi: এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং মাতা তুলসীর বিশেষ পূজা করা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, যে ব্যক্তি এই দিনে নিয়ম ও শ্রদ্ধা সহকারে ব্রত পালন করেন, তার জীবন থেকে নেতিবাচকতা দূর হয় এবং সুখ-সমৃদ্ধি আসে। তবে শাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে কিছু কাজ ভুলেও করা উচিত নয়, অন্যথায় এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যক্তির জীবনে পড়তে পারে। আসুন জেনে নিই সেই কাজগুলো সম্পর্কে যা এই পবিত্র দিনে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।

দেবোত্থান একাদশীর গুরুত্ব

দেবোত্থান একাদশী, যা প্রবোধিনী একাদশী বা তুলসী একাদশী নামেও পরিচিত, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, চার মাস যোগনিদ্রায় থাকার পর যখন ভগবান বিষ্ণু জাগরিত হন, তখন পৃথিবীতে পুনরায় শুভ কাজ শুরু হয়। এই চার মাসকে চাতুর্মাস বলা হয়, এই সময়ে কোনো মাঙ্গলিক কাজ করা হয় না।

এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং মাতা তুলসীর বিবাহও সম্পন্ন করানো হয়। এই বিবাহ প্রতীকীভাবে অসুরদের উপর দেবতাদের বিজয় এবং ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করে। এই কারণেই অনেক পরিবারে এই দিনটি অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসাহের সাথে উদযাপন করা হয়।

এই কাজগুলি থেকে বিরত থাকুন

১. একাদশীর দিনে চাল খাবেন না

দেবোত্থান একাদশীর দিনে চাল খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে চাল খেলে ব্যক্তি পরবর্তী জন্মে কীট-পতঙ্গের যোনিতে জন্ম নেয়। শাস্ত্র অনুসারে, চালে 'জল তত্ত্ব' বেশি থাকে, যা অলসতা বাড়ায়। তাই এই দিনে শুধু ব্রতধারীরাই নন, বরং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও চাল খাওয়া উচিত নয়।
যদি আপনি ব্রত পালন করেন, তাহলে ফল, সাবুদানা, চিনাবাদাম বা সিঙ্গাড়া (আটা) দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। এতে শক্তি বজায় থাকে এবং ব্রতও সফল হয়।

২. তুলসী পাতা ছেঁড়া অশুভ বলে মনে করা হয়

দেবোত্থান একাদশীর দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং মাতা তুলসীর বিবাহ হয়। এই দিনে তুলসী মাতা নিজেও ব্রত রাখেন, তাই এই দিনে তুলসী পাতা ছেঁড়া উচিত নয়।
যদি আপনি ভগবান বিষ্ণুকে ভোগ নিবেদন করতে চান, তাহলে এক দিন আগেই তুলসী পাতা ছিঁড়ে রাখুন। এই দিনে তুলসীর পূজা করা এবং তুলসী বিবাহে অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। তুলসী মাতাকে প্রদীপ অর্পণ করলে ঘরে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়।

৩. মাংস-মদ এবং তামসিক খাবার থেকে দূরে থাকুন

একাদশীর দিনকে সাত্ত্বিকতার প্রতীক মনে করা হয়। শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে এই দিনে মাংস, মদ, পেঁয়াজ, রসুন এবং তামসিক খাবার গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এমন করলে ব্রতের ফল নষ্ট হয় এবং জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই দিনে মন, বাক্য এবং কর্মে শুদ্ধ থাকা উচিত। ভগবান বিষ্ণুর ভক্তিতে মগ্ন হয়ে ভজন-কীর্তন, কথা-পাঠ এবং ধ্যান করলে পুণ্য লাভ হয়।

৪. দিনের বেলায় ঘুমানো উচিত নয়

দেবোত্থান একাদশীর দিনে দিনের বেলায় ঘুমানো নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়। বলা হয় যে, এই দিনে যে ব্যক্তি দিনের বেলায় ঘুমায়, তার ব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, একাদশীর দিনে জাগরণ করা শুভ হয় কারণ এতে মানুষ বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।
এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমা বা ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে কথা শোনা উচিত এবং ভজন-কীর্তন করা উচিত। সারারাত ভগবানের নাম স্মরণ করা এই দিনে বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

৫. ঝগড়া-বিবাদ এবং কটু কথা বলা থেকে বিরত থাকুন

দেবোত্থান একাদশীর দিনে মনকে শান্ত ও সংযত রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারো সাথে ঝগড়া বা তর্ক করা থেকে বিরত থাকা উচিত। সেই সাথে কারো প্রতি আপত্তিকর বা কটু কথা বলা উচিত নয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ ব্রতের ফল নষ্ট করে দেয়।
তাই চেষ্টা করুন সারাদিন ইতিবাচক চিন্তা রাখতে এবং প্রেম, দয়া ও সহনশীলতার মনোভাব গ্রহণ করতে।

দেবোত্থান একাদশীর পূজা পদ্ধতি

দেবোত্থান একাদশীর দিনে সকালে স্নানের পর ব্রত পালনের সংকল্প নেওয়া হয়। ভগবান বিষ্ণুর পিতম্বর বস্ত্র পরিহিত মূর্তি স্থাপন করুন এবং তুলসীর সাথে তাঁর পূজা করুন। তুলসী-দল, পঞ্চামৃত, দুধ, দই, ঘি, মধু এবং গঙ্গাজল দিয়ে ভগবানের অভিষেক করুন।
রাত্রিতে জাগরণ করুন এবং পরের দিন দ্বাদশী তিথিতে ব্রতের পারণ করুন। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে ব্রত রাখা এবং দান করলে অক্ষয় পুণ্য লাভ হয়।

ধর্মীয় গুরুত্ব এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

দেবোত্থান একাদশী শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টি বছরের এমন একটি সময় যখন ঋতু পরিবর্তন হয়। ব্রত এবং সাত্ত্বিক খাবার শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। তুলসী পূজা এবং জাগরণ মানসিক শান্তি ও ইতিবাচকতা বৃদ্ধি করে।
শাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে করা একটি ছোট শুভ কাজও সাধারণ দিনের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ফলদায়ক হয়।

Leave a comment