প্রধানমন্ত্রীর সভার আগের দিন আচমকা সিদ্ধান্ত বদল দিলীপের গন্তব্য কলকাতা নয় দিল্লি!

প্রধানমন্ত্রীর সভার আগের দিন আচমকা সিদ্ধান্ত বদল দিলীপের গন্তব্য কলকাতা নয় দিল্লি!

রাজনীতির মঞ্চে নাটকীয় মোড় যেন এখন রোজকার ঘটনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের দিলীপ ঘোষের সিদ্ধান্ত বিজেপির অন্দরমহলে নতুন করে ঢেউ তুলেছে। আগেই জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর দুর্গাপুর সভায় যাবেন তিনি, এমনকি কর্মীদের পাশে বসে ভাষণ শোনারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অথচ সভার আগের রাতেই আচমকা জানিয়ে দেন—তিনি সেখানে যাচ্ছেন না! এবং শুক্রবার দুপুরে দেখা গেল, দিল্লিতে হাজির দিলীপ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার বাড়িতে।

এই অনির্ধারিত সফরের নেপথ্যে সত্যিই কি 'গল্প'? নাকি গভীর রাজনীতির জল ঘোলা?

যখন দুর্গাপুরের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগছেন, সেই সময়েই প্রায় সমান্তরালে দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দিলীপ ঘোষ। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে নাড্ডার সঙ্গে কথা হয় তাঁর। কী নিয়ে এই আলোচনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নে দিলীপ শুধু বলেন, অনেক গল্প হয়েছে! কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা জানেন, এ ধরনের ‘গল্প’ সবসময় নিছক কথোপকথন হয় না। এর আড়ালে থাকতে পারে অম্লমধুর সঙ্কেত।

অভিমান কি এখনও মেটেনি? মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজিরা থেকেই দলীয় দূরত্বের সূত্রপাত!

প্রসঙ্গত, এপ্রিলের শেষদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে হাজির হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির একাংশ এই পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করে। সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও দিলীপের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এমনকী, রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও ডাক পাননি দিলীপ। পরবর্তীতে শমীকের মধ্যস্থতায় বরফ কিছুটা গললেও, আদতে অভিমান থেকেই যায়।

দলীয় আমন্ত্রণ ছাড়াই যাওয়ার সিদ্ধান্ত, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ‘নেতৃত্বের বিড়ম্বনা’র যুক্তি

দিলীপ ঘোষ নিজে জানান, দুর্গাপুরের সভায় দলের তরফে কোনও আমন্ত্রণ না এলেও স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা তাঁকে আমন্ত্রণ করেছেন। তাই তিনি মঞ্চে জায়গা না পেলেও, কর্মীদের সঙ্গে থেকে মোদীর বক্তৃতা শোনার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়ে বলেন—আমার যাওয়া নিয়ে দল বিড়ম্বনায় পড়তে পারে, তাই যাচ্ছি না। এত কিছুর পরেও দিলীপ ঘরে বসে থাকেননি। যেখানেই গিয়েছেন, তা আরও বড় বার্তা বহন করে নিয়েছে রাজনীতির পাটিগণিতে।

দিল্লির রাজপথে দিলীপ–নাড্ডা সাক্ষাৎ: শুধু গল্প, না কি গভীর বার্তা?

শুক্রবার সকালেই বিমানে দিল্লিতে পৌঁছান দিলীপ ঘোষ। দুপুরে প্রথমবার যান নাড্ডার বাসভবনে, কিন্তু তখন নাড্ডা উপস্থিত ছিলেন না। পরে বিকেল তিনটে নাগাদ আবার দেখা যায় তাঁর গাড়ি সেই বাসভবনে ঢুকতে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে দিলীপ দলীয় কিছু নেতার আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাল্টা নাড্ডা তাঁকে অযথা ‘আলটপকা মন্তব্য’ না করার পরামর্শ দেন। অর্থাৎ, দুই পক্ষের কথায় ছিল অভিযোগ–উপদেশের পালা। তাই ‘গল্প’ শব্দটি যতটা হালকা শোনায়, আলোচনার বাস্তব রূপ ছিল ততটাই কড়া ও কৌশলী।

প্রধানমন্ত্রীর সভায় না গিয়ে দিল্লিতে গিয়ে বার্তা, দিলীপের পদক্ষেপে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত?

গতবার আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমন্ত্রণ না পেয়ে ঘরে বসেই মোদীর ভাষণ শুনেছিলেন দিলীপ ঘোষ। এবার তাঁর পদক্ষেপ আরও স্পষ্ট বার্তা বহন করছে। ঘরে বসে না থেকে তিনি গেছেন সোজা দিল্লিতে, নাড্ডার দরজায়। প্রশ্ন উঠছে—এই পদক্ষেপ কি দিলীপ ঘোষের ভবিষ্যৎ অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে? বিজেপিতে তাঁর গুরুত্ব কী আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে?

Leave a comment