অবসরকালীন সঞ্চয়ে সুখবর
অবসর জীবনের কথা উঠলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে চিন্তার রেখা। কিন্তু যাঁরা EPFO-র আওতায় রয়েছেন, তাঁদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি। কারণ কর্মজীবনের প্রতিটি মাসে বেতনের সঙ্গে সঙ্গে পিএফ ও পেনশনে টাকা জমতে থাকে। নিয়োগকর্তা যেমন একটি অংশ দেন, তেমনি কর্মীও অবদান রাখেন। দুই মিলে তৈরি হয় অবসরকালীন সঞ্চয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছিল, অনেক কর্মী এই সুবিধার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এবার সেই অন্যায় দূর করল EPFO।
৬ মাস কাজ না করলেও মিলবে পেনশনের সুবিধা
আগে যদি কেউ মাত্র ৫ মাস কাজ করে চাকরি ছেড়ে দিতেন, তাহলে তাঁর পেনশনের অধিকার বাতিল হয়ে যেত। কিন্তু এখন থেকে আর তা হবে না। EPFO স্পষ্ট জানিয়েছে, এক মাসও যদি চাকরি করেন এবং EPS-এ অবদান রাখেন, তবুও আপনি পেনশনের যোগ্য হবেন। অর্থাৎ, ছোট চাকরির মেয়াদকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পুরনো নিয়ম বনাম নতুন নিয়ম
এর আগে EPS (Employees’ Pension Scheme)-এ একটি নিয়ম ছিল— শূন্য পূর্ণ বছর। অর্থাৎ ৬ মাসের কম সময়ে চাকরি করলে তা ধরা হত না, ফলে কর্মী পেনশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন। এপ্রিল-মে ২০২৪ সালে প্রকাশিত নতুন সার্কুলারে সেই নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়। এখন এক মাস চাকরি করলেও কর্মীর অবদান নষ্ট হবে না।
কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন?
এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি স্বস্তি এনে দেবে বিপিও, লজিস্টিকস ও কনট্র্যাক্ট-বেসড কর্মীদের। এ সব খাতে কর্মীরা অল্প সময়ের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন বা বদল করেন। আগে তাঁরা PF-এর টাকা তুলতে পারলেও EPS-এ অবদান হারিয়ে ফেলতেন। কিন্তু এখন থেকে তাঁদের পেনশন সুবিধাও অক্ষুণ্ণ থাকবে। তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্যও এটি দারুণ খবর।
নিয়ম ভঙ্গ হলে কী করবেন?
যদি কেউ ৬ মাসের কম সময়ে চাকরি ছেড়ে দেন এবং পিএফ পাসবুকে EPS-এর অবদান দেখতে না পান, তাহলে ২০২৪ সালের সার্কুলারের কথা উল্লেখ করে সরাসরি EPFO-তে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এতে কর্মীদের অধিকার রক্ষা হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য অবদান বাঁচানো সম্ভব হবে।
আবেদন করার সময় কী মনে রাখবেন?
অভিযোগ বা আবেদন করার সময় পিএফ পাসবুকের স্ক্রিনশট বা পিডিএফ কপি সংরক্ষণ করা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, বিশেষ করে তরুণ কর্মীরা EPS ফান্ড তুলতে পারেন না। ফলে তাঁদের টাকাই আটকে থাকে। কিন্তু নতুন নিয়মে সেই সমস্যার সমাধান হবে।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তন?
চাকরির বাজারে অস্থায়ী কাজ বাড়ছে। একদিকে কর্পোরেট খাতে কনট্র্যাক্ট বেসড নিয়োগ, অন্যদিকে যুবকদের ঘন ঘন চাকরি বদল— এই পরিস্থিতিতে EPS-এর পুরনো নিয়ম অনেকের সঞ্চয় কেটে দিত। এবার সেই ভুল সংশোধন হল। বলা যায়, এই পরিবর্তন কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং অবসর জীবনের জন্য তাঁদের আশ্বাস জোগাবে।
সারসংক্ষেপ
সংক্ষেপে বললে—
আগে ৬ মাসের কম চাকরি করলে EPS সুবিধা পাওয়া যেত না।
এখন ১ মাস চাকরি করলেও অবদান হারাবে না।
বিপিও, লজিস্টিকস ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।
পিএফ পাসবুক চেক করতে হবে এবং সমস্যা হলে অভিযোগ জানাতে হবে।
এই নতুন নিয়ম লাখো কর্মীর মুখে হাসি ফোটাবে। অবসরের সঞ্চয় আর অল্প সময়ের চাকরির কারণে নষ্ট হবে না— এটাই এই সংস্কারের সবচেয়ে বড় সাফল্য।