প্রথম এআই রোবট পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি: চীনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

প্রথম এআই রোবট পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি: চীনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ

এআই (AI) এবং রোবোটিক্সের জগতে প্রতিদিন নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে, এবং এই প্রযুক্তি এখন আর কেবল কল্পনা নয়, বরং বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর বিশ্বের অনেক দেশ দ্রুত গতিতে কাজ করছে, তবে চীন এই ক্ষেত্রে ক্রমাগত একের পর এক কীর্তি স্থাপন করে চলেছে।

AI Robot: চীন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং রোবোটিক্সের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। প্রথমবারের মতো কোনো এআই হিউম্যানয়েড রোবটকে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ শুধু প্রযুক্তিগত বিশ্বের জন্য মাইলফলক নয়, বরং শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এই অত্যাধুনিক রোবটটির নাম জুয়েবা 01 (Xueba 01), যা সাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ড্রয়েডআপ রোবোটিক্স (DroidUp Robotics) যৌথভাবে তৈরি করেছে। এখন এই রোবট সাংহাই থিয়েটার একাডেমিতে চার বছরের পিএইচডি প্রোগ্রাম করবে, যেখানে এর গবেষণার মূল বিষয় হবে চীনা অপেরা (Chinese Opera)।

কে এই জুয়েবা 01?

জুয়েবা 01 একটি হিউম্যানয়েড রোবট, যা দেখতে শুধু মানুষের মতো নয়, বরং এর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মুখের অভিব্যক্তিও মানুষের মতোই। এই রোবটটিকে অত্যন্ত উন্নত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং এবং ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন সিস্টেমের সাথে ডিজাইন করা হয়েছে।

  • ওজন: প্রায় ৩০ কেজি
  • উচ্চতা: ১.৭৫ মিটার
  • বডি মেটেরিয়াল: সিলিকন স্কিন যা মানুষের মতো অনুভূতি এবং অভিব্যক্তি দিতে সক্ষম
  • প্রধান ক্ষেত্র: চীনা অপেরা, পারফর্মিং আর্টস, এবং সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন

পিএইচডি-তে কী পড়বে এই রোবট?

জুয়েবা 01 কে সাংহাই থিয়েটার একাডেমিতে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি করা হবে। এই রোবটটির গবেষণার ক্ষেত্র হবে:

  • ঐতিহ্যবাহী চীনা অপেরার প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ
  • ভাব-ভঙ্গিমা এবং সংলাপ শৈলীর এআই মডেলিং
  • শিল্পকলায় রোবোটিক্স এবং এআই-এর ব্যবহার
  • মানবিক অনুভূতিগুলোকে মঞ্চে প্রকাশ করার মেশিন লার্নিং প্রক্রিয়া

এই গবেষণার উদ্দেশ্য হল রোবটকে সংস্কৃতি এবং শিল্পের সাথে একত্রিত করা, যার মাধ্যমে প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্যের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করা যেতে পারে।

প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে চীনের প্রভাবশালী পদক্ষেপ

চীন আগে থেকেই এআই এবং রোবোটিক্সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এইবারের পরীক্ষাটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং মানবিক এবং পারফর্মিং আর্টসের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও এআই-এর সম্ভাবনা খোঁজার একটি প্রচেষ্টা। জুয়েবা 01-এর পিএইচডি প্রোগ্রাম এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে এআই-এর ব্যবহার এখন কেবল ডেটা প্রসেসিং বা অটোমেশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুপ্রেরণামূলক হতে পারে।

যদিও এই প্রশ্ন বারবার উঠেছে যে রোবট এবং এআই ভবিষ্যতে মানুষের জায়গা নিতে পারে কিনা, তবে জুয়েবা 01-এর এই পরীক্ষাটি দেখায় যে এআই-কে মানুষের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের প্রতিস্থাপন হিসেবে নয়। এই রোবট একটি “গবেষক” হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু সিদ্ধান্ত এবং বিশ্লেষণ এখনও মানুষের তত্ত্বাবধানে থাকবে। এর উদ্দেশ্য কেবল জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো এবং শৈল্পিক অভিব্যক্তিতে প্রযুক্তিকে যুক্ত করা।

বৈশ্বিক এআই পরিস্থিতিতে চীনের অগ্রগতি

চীন ইতিমধ্যেই এআই ভিত্তিক শিক্ষক, স্বয়ংক্রিয় রোবট, এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জুয়েবা 01-কে পিএইচডি-তে অন্তর্ভুক্ত করে চীন এআই-কে একাডেমিক এবং শৈল্পিক গবেষণার অংশ করে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এই খবর সামনে আসার পর বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ এটিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে দেখছেন, আবার কিছু মানুষ উদ্বিগ্ন যে এর ফলে মানব সমাজে এআই-এর ভূমিকা কতটা গভীর হয়ে যাবে।

Leave a comment