পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের স্বামী সফদার আওয়ান একটি জনসভায় আহমদিয়া সম্প্রদায় এবং মুমতাজ কাদরির সমর্থনে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর ভাষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর বিরোধী দল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি এর তীব্র নিন্দা করেছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের সরকার সম্প্রতি তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (TLP) এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই এখন মরিয়ম নওয়াজের স্বামী ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) সফদার আওয়ানের মন্তব্য আলোচনার কেন্দ্রে। সফদার আওয়ান একটি জনসভার সময় সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ভাষণ দিয়েছেন, যা নিয়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এই মন্তব্যটি লাহোর থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে চিওট জেলায় আয়োজিত একটি সমাবেশের সময় করা হয়েছিল।
ভাষণে কট্টরপন্থী মন্তব্য
জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে সফদার আওয়ান বলেন যে তিনি চান পাকিস্তানের প্রতিটি ঘরে মুমতাজ কাদরির মতো ব্যক্তি জন্ম নিক। মুমতাজ কাদরি সেই ব্যক্তি যিনি ২০১১ সালে পাঞ্জাবের তৎকালীন গভর্নর সালমান তাসিরের হত্যা করেছিলেন। কাদরির যুক্তি ছিল যে তাসির ব্লাসফেমি আইনের সমালোচনা করেছিলেন এবং ব্লাসফেমির অভিযোগে জেলে বন্দি খ্রিস্টান মহিলা আসিয়া বিবির সমর্থন করেছিলেন। কাদরিকে পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। কিছু কট্টরপন্থী গোষ্ঠী আজও কাদরিকে সমর্থন ও সম্মানের প্রতীক বলে মনে করে।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সফদার আওয়ান তাঁর ভাষণে আহমদিয়া সম্প্রদায়কেও লক্ষ্যবস্তু করেন। তিনি দাবি করেন যে তাঁর আশঙ্কা, আহমদিয়া সম্প্রদায় চিনাব নগরে জমি কিনে ইসরায়েলের মতো একটি পৃথক দেশ তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন যে ‘খতম-ই-নবুয়ত’-এর ধারণা রক্ষার জন্য মুমতাজ কাদরির মতো লোকের প্রয়োজন। ‘খতম-ই-নবুয়ত’ হলো ইসলামিক বিশ্বাসের সেই নীতি, যার মতে হজরত মুহাম্মদ শেষ নবী এবং তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া
সফদারের ভাষণের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বহু নাগরিক, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী এই মন্তব্যকে সহিংসতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার মতো বলে অভিহিত করেছেন। জনগণ এও বলেছেন যে, যখন পাঞ্জাব সরকার টিএলপি-র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কট্টরপন্থা রোধ করার চেষ্টা করেছে, তখন মুখ্যমন্ত্রীর স্বামীর মঞ্চ থেকে এই ধরনের মন্তব্য করা গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
মরিয়ম নওয়াজের উপর চাপ বাড়ল
বিরোধী এবং অনেক সামাজিক সংগঠন মরিয়ম নওয়াজের কাছে তাঁর স্বামীর মন্তব্যে স্পষ্ট অবস্থান চেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই বিষয়টি এ কারণেও গুরুত্বপূর্ণ কারণ মরিয়ম নওয়াজ বর্তমানে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছেন এবং তাঁর ভাবমূর্তি একজন উদারবাদী, গণতন্ত্রপন্থী নেতার বলে পরিচিত। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর স্বামীর এই মন্তব্য সেই ভাবমূর্তির বিপরীত বলে মনে করা হচ্ছে।
পাঞ্জাব সরকার গত মাসে টিএলপি-র উপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছিল। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হয়েছিল যখন পুলিশ এবং টিএলপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৬ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং ১৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিল। টিএলপি দীর্ঘদিন ধরে ব্লাসফেমি আইন এবং ধর্মীয় পরিচয়ের বিষয়ে চরম অবস্থানের জন্য পরিচিত।













