পিত্তথলিতে পাথর এখন একেবারে ঘরের রোগ হয়ে উঠেছে। এই অসুখটা যতটা শারীরিক, তার চেয়েও বেশি খাদ্য নির্ভর। চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, আমাদের শরীরে বিলিরুবিন ও কোলেস্টেরলের ভারসাম্য একটু এদিক-ওদিক হলেই পিত্তথলিতে জমে যেতে পারে ক্ষুদ্র অথচ যন্ত্রণাদায়ক এক টুকরো পাথর। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওষুধে উপশম হয় ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে শেষ ঠিকানা অস্ত্রোপচার। ফলে আগেভাগেই সাবধান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
খাবার বদলান, জীবন বাঁচান
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁদের পিত্তথলিতে স্টোন আছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের খাদ্যতালিকা হওয়া উচিত ‘লো ফ্যাট হাই ফাইবার’। মানে কম চর্বি আর বেশি আঁশ। সঙ্গে ভিটামিন সি থাকা জরুরি। কিন্তু যতটা দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা। কারণ, এই খাবারগুলো খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ভিতরে শুরু হয় জটিল রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, যা সরাসরি প্রভাব ফেলে গলব্লাডারের উপরে।
ছোট বীজে বড় বিপদ টম্যাটো ও বেগুন
টম্যাটো আর বেগুন—শুধু রান্নায় নয়, আমাদের রোজকার খাদ্য তালিকার অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু জানেন কি, এই দুই সবজির ভিতরে থাকা ছোট ছোট বীজ আমাদের গলব্লাডারে গিয়ে তৈরি করতে পারে চরম অস্বস্তি? বীজগুলো ছোট হলেও হজমে বাধা দেয়। বিশেষ করে যখন পিত্তথলি সঠিকভাবে পিত্ত নিঃসরণ করতে পারে না, তখন এই বীজগুলো আরও বেশি সমস্যা তৈরি করে। তাই পাথরের আশঙ্কা থাকলে এই সবজি দু’টিকে আপাতত বিদায় জানানোই ভালো।
চা-কফি নয়, এবার জলেই বিশ্বাস রাখুন
চা ও কফি দুটোই সকাল থেকে রাত—নেশার মতো অভ্যেস। কিন্তু এগুলোর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন শরীরের পিত্ত নিঃসরণ প্রক্রিয়াকে এমনভাবে উত্তেজিত করে তোলে যে, তা পেটে তীব্র ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং খিঁচুনি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। উপরন্তু, এই পানীয়গুলি শরীরকে দ্রুত জলশূন্য করে, যা পিত্তথলির পাথর তৈরির অন্যতম কারণ। তাই ক্যাফেইন-প্রীতি কমিয়ে জলভিত্তিক খাবারের দিকে ঝুঁকুন।
পালং শাক ও বিট: স্বাস্থ্যকর নয়, বিপজ্জনক হতে পারে
যদিও পালং শাক আর বিটকে আমরা ‘সুপারফুড’ হিসেবে জানি, তবে গলব্লাডারের সমস্যা থাকলে এই খাবারদুটো আপনার জন্য নয়। কারণ এদের মধ্যে থাকে উচ্চমাত্রার অক্সালেট, যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলে শরীরে তৈরি করতে পারে স্ফটিক। এই স্ফটিকগুলোই পরে রূপ নেয় পাথরে। তাই স্টোনের রুগী হলে পালং শাক খাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়।
কিছু ডালও হতে পারে ‘স্টোন মেকার’!
ডাল মানেই প্রোটিন, ডাল মানেই পুষ্টি। কিন্তু সব ডাল সব শরীরের জন্য নয়। বিশেষ করে রাজমা, ছোলা ও অড়হর ডাল—এই তিনটি ডালে প্রোটিনের সঙ্গে উচ্চমাত্রার ফাইবারও থাকে। একদিকে ভাল হলেও, অন্যদিকে এগুলো হজমে সময় নেয় বেশি। ফলে পিত্তথলিতে চাপ পড়ে এবং পাথরের উপসর্গ তীব্র হতে থাকে। তাই এসব ডাল খাওয়ার অভ্যেস থাকলে সেটা পরিবর্তন করাই শ্রেয়।
লাল মাংস ও ডিমের কুসুম: সরাসরি বিপদ ডেকে আনে
লাল মাংস এবং ডিমের কুসুম—উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের ভাণ্ডার। এগুলো হজমে লাগে সময়, আর পিত্তথলির ওপর পড়ে প্রচণ্ড চাপ। যেখানে পিত্তথলির কার্যকারিতাই দুর্বল, সেখানে এমন ভারী খাবার মানেই নতুন পাথরের আমন্ত্রণ। কাজেই যাঁরা গলব্লাডার স্টোনের সমস্যায় ভুগছেন বা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের জন্য এই খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলেই মনে করেন চিকিৎসকেরা।
“খাওয়ার আগে ভাবুন, যন্ত্রণা এড়ান”
পিত্তথলির পাথরের সমস্যা মানে শুধু অসহ্য পেটব্যথা নয়, সেটা ধীরে ধীরে রূপ নিতে পারে বড় শারীরিক জটিলতায়। তাই চিকিৎসা শুরু করার আগে, একবার আপনার থালার দিকেও তাকান। কারণ আপনার খাদ্যাভ্যাসই ঠিক করবে, ভবিষ্যতে আপনি অপারেশন থিয়েটারে যাবেন নাকি সুস্থ জীবনের পথে চলবেন।