বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে সোনার দামে বিশাল পতন দেখা গেছে। অল ইন্ডিয়ান সররাফা অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, ৯৯.৯ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনা একদিনেই ১৪০০ টাকা কমে ৯৯৬২০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে এসে দাঁড়িয়েছে। বুধবার এর দাম ছিল ১০১0২০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। একই সময়ে, ৯৯.৫ শতাংশ বিশুদ্ধতার সোনার দাম ১২০০ টাকা কমে ৯৯২৫০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে এসে দাঁড়িয়েছে।
রূপার দামেও তীব্র পতন
বৃহস্পতিবার রূপার দামেও বড় পতন দেখা গেছে। বুধবার যেখানে রূপার দাম ছিল ১১৮০০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম, সেখানে বৃহস্পতিবার ৩০০০ টাকা কমে ১১৫০০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে এসে পৌঁছেছে। এই আকস্মিক পতনে বিনিয়োগকারীরা হতবাক হয়েছেন।
মুনাফা আদায় এবং বিশ্বব্যাপী চাপের কারণে এই অবস্থা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতনের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, দেশীয় বাজারে স্টকিস্টদের দ্বারা মুনাফা আদায় এবং দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল ইঙ্গিত। গত কিছুদিন ধরে সোনা ও রূপার দাম ক্রমাগত বাড়ছিল, তাই ব্যবসায়ীরা মুনাফা বুক করা শুরু করেছেন।
আমেরিকার অর্থনৈতিক তথ্যের দিকে নজর
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন আমেরিকা থেকে আসা বেকারত্বের পরিসংখ্যান এবং S&P গ্লোবাল ফ্ল্যাশ পিএমআই রিপোর্টের দিকে। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা বোঝা যাবে যে আমেরিকান অর্থনীতির গতি কেমন এবং ফেডারেল রিজার্ভ পরবর্তী আর্থিক নীতি বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই কারণেই আপাতত বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হয়ে গেছেন।
ডলারের গতিবিধিতে কিছুটা সাহায্য
তবে ডলারের দুর্বলতা সোনাকে কিছুটা সাহায্য করেছে। ডলারে পতন হলে সাধারণত সোনা সস্তা হয়ে যায়, যার ফলে তার চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সাহায্যও বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতামত
জেএম ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের কমোডিটি রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রণব মের জানিয়েছেন যে জাপান, আমেরিকা ও ফিলিপাইনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য চুক্তির কারণে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সোনার চাহিদার ওপর।
অন্যদিকে এলকেপি সিকিউরিটিজের অ্যানালিস্ট যতীন ত্রিবেদী বলেছেন যে গত কয়েক সপ্তাহে শুল্ক নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা সোনার দামকে সমর্থন জুগিয়েছিল, কিন্তু এখন যখন এই আলোচনায় কিছু স্পষ্টতা এসেছে, তখন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সোনা থেকে সরে যাচ্ছে।
স্পট সিলভারের অবস্থা
গ্লোবাল মার্কেটে রূপার দামেও পতন দেখা গেছে। স্পট সিলভার প্রায় ০.৫৩ শতাংশ কমে ৩৯.০৫ ডলার প্রতি আউন্সে এসে দাঁড়িয়েছে। এটিও ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ থেকে সরে গিয়ে অন্য সম্পত্তিতে ঝুঁকছেন।
ইউরোপীয় বাজারেরও নজর
শুধু আমেরিকাই নয়, ইউরোপের বিনিয়োগকারীরাও সেন্ট্রাল ব্যাংকের পরবর্তী সুদের হারের নীতির দিকে নজর রাখছেন। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক কর্তৃক সুদের হারে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন মুদ্রা বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। এর প্রভাব সোনা-রূপার দামেও দেখা যেতে পারে।
কয়েক দিনের মধ্যে এত পতন কেন
গত কয়েক সপ্তাহে সোনার দাম অনেক রেকর্ড তৈরি করেছিল। কখনও ১০১০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামের উপরে চলে গিয়েছিল, আবার কখনও রূপা ১১৮০০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রামের অঙ্ক ছুঁয়েছিল। এই উচ্চ স্তরে পৌঁছানোর পর এখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলা শুরু করেছেন, যার ফলে দামে দ্রুত পতন দেখা গেছে।
দিল্লি ছাড়াও অন্য শহরেও প্রভাব
দিল্লি ছাড়াও মুম্বাই, আহমেদাবাদ, লখনউ, কলকাতার মতো বড় শহরগুলোতেও সোনা ও রূপার দামে পতন দেখা গেছে। একদিকে ক্রেতারা এই পতনকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে জুয়েলার্সরা আপাতত সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
আরও কি দাম কমবে
আপাতত বাজারের প্রবণতা এটাই বলছে যে যতক্ষণ না আমেরিকা এবং অন্যান্য প্রধান দেশগুলোর অর্থনৈতিক তথ্য স্পষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সোনা-রূপার দামে ওঠানামা বজায় থাকবে। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক আছেন এবং আন্তর্জাতিক সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছেন।