মুম্বইয়ের সুপরিচিত সোনার গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল অবশেষে তাদের ইনিশিয়াল পাবলিক অফার অর্থাৎ আইপিও নিয়ে এসেছে। এই ইস্যুটি ২৫শে জুলাই তারিখে খোলা হয়েছে এবং ২৯শে জুলাই পর্যন্ত এতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি শেয়ারের দাম ১৮৯ টাকা থেকে ১৯৯ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এর আগে কোম্পানিটি অ্যাংকর বিনিয়োগকারীদের থেকে ১০৮ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে।
দেশজুড়ে কোম্পানির উপস্থিতি
শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনালের প্রধান কার্যালয় মুম্বইতে অবস্থিত এবং এটি দেশের ১৫টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে। কোম্পানিটির শাখা বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ এবং মুম্বইয়ের মতো বড় শহরগুলিতে রয়েছে। শান্তি গোল্ড ২২ ক্যারেটের সিজেড কাস্টিং গোল্ড জুয়েলারি তৈরি করে এবং এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০০ কিলোগ্রাম।
আয়-এ অসাধারণ বৃদ্ধি
কোম্পানির সাম্প্রতিক ব্যবসায়িক পরিসংখ্যান এর ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রদর্শন করে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনালের মোট আয় ছিল ১১০৬.৪১ কোটি টাকা, যা গত বছরের ৭১১.৪৩ কোটি টাকা থেকে ৫৫ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়, এইবার নিট মুনাফা ৫৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের ২৭ কোটি টাকা থেকে দ্বিগুণেরও বেশি।
বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোম্পানির দৃঢ় সম্পর্ক
শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দেশের প্রধান জুয়েলারি ব্র্যান্ড যেমন জয়আলুক্কাস, ললিতা জুয়েলারি এবং আলু্ক্কাস এন্টারপ্রাইজের সাথে রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে কোম্পানি একটি বৃহত্তর বাজার পেয়েছে এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতিও শক্তিশালী হয়েছে। ফলে এর গ্রাহকদের পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে।
আইপিও-র সম্পূর্ণ বিবরণ
কোম্পানি এই আইপিওর মাধ্যমে মোট ১.৮১ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করছে। এর মাধ্যমে সব মিলিয়ে ৩৬০.১১ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এটি একটি ফ্রেশ ইস্যু এবং এতে কোনো অফার ফর সেল রাখা হয়নি। এই আইপিও-র ন্যূনতম লট ৭৫টি শেয়ারের অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারীকে কমপক্ষে ১৪,১৭৫ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
আইপিও থেকে সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার
শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল আইপিও থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড় অংশ কোম্পানির বিস্তার এবং ব্যবসার উন্নতিতে ব্যবহার করতে চলেছে। জয়পুরে একটি নতুন কারখানা স্থাপনের জন্য ৪৬.৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে। অন্যদিকে, ২০০ কোটি টাকা কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজনে রাখা হবে। এছাড়াও, ১৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে লাগানো হবে এবং বাকি অর্থ সাধারণ কর্পোরেট কাজে ব্যবহার করা হবে।
আইপিও ব্যবস্থাপনা এবং তালিকাভুক্তি সম্পর্কিত তথ্য
এই ইস্যুর বুক রানিং লিড ম্যানেজার হল চয়েস ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজার্স এবং রেজিস্ট্রার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিগশেয়ার সার্ভিসেসকে। আইপিও-র অ্যালোটমেন্ট ৩০শে জুলাই করা হবে এবং কোম্পানির শেয়ার ১লা আগস্ট তারিখে বিএসই এবং এনএসই উভয় স্থানে তালিকাভুক্ত হবে।
অ্যাংকর বিনিয়োগকারীদের আস্থা
আইপিও খোলার একদিন আগে অর্থাৎ ২৪শে জুলাই তারিখে কোম্পানি অ্যাংকর ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে ১০৮.০৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এতে সোসাইটি জেনারেল, ওয়েলথওয়েভ ক্যাপিটাল ফান্ড, বিজিত গ্রোথ ফান্ড, স্মার্ট হরাইজন অপরচুনিটি ফান্ডের মতো অনেক বড় বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির ব্যবসা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোর ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
সোনার বাজারে স্থিতিশীলতা ও চাহিদার সুবিধা
ভারতে সোনা এবং বিশেষ করে সোনার গয়নার চাহিদা বছর বছর ধরে বজায় থাকে। উৎসব, বিয়ে এবং বিনিয়োগের জন্য সোনার চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। শান্তি গোল্ডের মতো যে কোম্পানিগুলো ডিজাইন, বিশুদ্ধতা এবং বিশ্বস্ততার উপর কাজ করে, তারা বাজারে আরও ভালো জায়গা করে নিতে পারে। এই কারণে বিনিয়োগকারীরা এই সেক্টরে সম্ভাবনা দেখছেন।
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির নজরে কোম্পানির অবস্থান
ব্রোকারেজ ফার্ম আনন্দ রাঠীর মতে, শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনালের প্রাইস টু আর্নিং অনুপাত ২৫.৭ গুণ, যা এই সেক্টরের গড় থেকে তুলনামূলকভাবে সুষম বলে মনে করা যেতে পারে। আইপিও-র পর কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ১৪৩৪.৭ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর ধারণা, কোম্পানির ট্র্যাক রেকর্ড, গ্রাহক নেটওয়ার্ক এবং ব্র্যান্ড সহযোগিতা এটিকে প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী করে তোলে।
আধুনিক প্রযুক্তির উপর কোম্পানির মনোযোগ
শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। এতে শুধু উৎপাদনের গুণগত মান ভালো হয় তাই নয়, সময় এবং খরচও সাশ্রয় হয়। কোম্পানির পরিকল্পনা রয়েছে যে ভবিষ্যতে তারা প্রযুক্তি এবং ডিজাইনের সমন্বয়ে একটি প্রিমিয়াম গোল্ড জুয়েলারি সেগমেন্টে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
বাজারে কোম্পানির অবস্থান
শান্তি গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল বিগত কয়েক বছরে ক্রমাগত উন্নতি করেছে। দেশজুড়ে এর বিতরণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হচ্ছে এবং ব্র্যান্ডের পরিচিতিও বাড়ছে। একই সাথে, কোম্পানি তাদের ডিলার এবং রিটেল পার্টনারদের মাধ্যমে গ্রামীণ এবং আধা-শহুরে এলাকাগুলোতেও পৌঁছাচ্ছে।