সোনার দামে উল্লম্ফন: কারণ ও বিনিয়োগের সুযোগ

সোনার দামে উল্লম্ফন: কারণ ও বিনিয়োগের সুযোগ

সোনার দামে এই বছর ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ অগাস্ট মাস পর্যন্ত সোনার দামে প্রায় ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। দুর্বল মার্কিন ডলার, বিশ্বব্যাপী শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষিত সম্পত্তিতে আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে দেখেন, এবং এই কারণেই এর চাহিদা বেড়েছে।

কমিক্সে সোনা ও রূপার দাম

সোমবার কমিক্স (COMEX)-এ সোনার দাম সামান্য হ্রাস পেয়ে ০.১২ শতাংশ কমে ৩৪৩0.৬০ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে। অন্যদিকে, রূপার দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ০.০৭ শতাংশ বেড়ে ৩৭.৮৫ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে। এছাড়া, তামার দাম ০.১৭ শতাংশ বেড়ে ৪.৩৯ ডলার হয়েছে। যদিও, প্ল্যাটিনাম এবং প্যালাডিয়ামের দামে পতন দেখা গেছে, যা যথাক্রমে ১৩২৭.৩০ ডলার এবং ১১৮৩ ডলারে বন্ধ হয়েছে।

SPDR Gold Trust-এর হোল্ডিং বৃদ্ধি

বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ-সমর্থিত ইটিএফ অর্থাৎ SPDR Gold Trust-এর হোল্ডিংও বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এর হোল্ডিং ছিল ৯৫৪.৮০ টন, যা মঙ্গলবার ০.১২ শতাংশ বেড়ে ৯৫৫.৯৪ টন হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের আস্থা সোনার উপর ক্রমাগত বাড়ছে।

২০ বছরে সোনার দাম ১,২০০ শতাংশ বেড়েছে

দীর্ঘমেয়াদী হিসেব অনুযায়ী, সোনা বিনিয়োগকারীদের চমৎকার রিটার্ন দিয়েছে। ২০০৫ সালে সোনার দাম ছিল প্রায় ৭,৬৩৮ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম, যা ২০২৫ সালে ১,০০,০০০ টাকার সীমা অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ ২০ বছরে এটি প্রায় ১,২০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি দেখিয়েছে। এর মধ্যে ১৬ বছর এমন ছিল যখন সোনার দামে শুধু বৃদ্ধি দেখা গেছে।

২০২৫ সালে সোনা সেরা পারফর্মার অ্যাসেট

২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত সোনার পারফরম্যান্স দেখলে, এটি এই বছরের সেরা পারফর্মিং অ্যাসেট ক্লাসগুলির মধ্যে একটি। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সোনা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্ন দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং আমেরিকা-চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার কারণে সোনার চাহিদা ও দামে আরও বৃদ্ধি হতে পারে।

ভারতের কথা বললে, দেশেও সোনার দাম দ্রুত বেড়েছে। বিভিন্ন শহরে সামান্য পার্থক্য থাকলেও, বেশিরভাগ মেট্রো শহরে ২৪ ক্যারেট সোনার ১০ গ্রামের দাম ৬২,০০০ টাকার উপরে রয়েছে, যেখানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রায় ৫৭,০০০ থেকে ৫৮,০০০ টাকার মধ্যে চলছে। উৎসবের মৌসুম কাছে আসতেই চাহিদা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রূপাও দেখিয়েছে দম, ক্রমাগত রয়েছে উচ্চতায়

সোনার পাশাপাশি রূপার দামেও দৃঢ়তা বজায় রয়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে রূপা ১ লক্ষ টাকা প্রতি কিলোগ্রামের উপরে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, শিল্প চাহিদা এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কারণে রূপার দামে এই দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে।

২০ বছরে রূপা দিয়েছে ৬৬৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি

২০০৫ সালে রূপার দাম যেখানে ১৩,০০০ থেকে ১৪,০০০ টাকা প্রতি কেজি ছিল, সেখানে আজ এর দাম ১ লক্ষ টাকার উপরে পৌঁছেছে। অর্থাৎ বিগত ২০ বছরে এতে প্রায় ৬৬৮.৮৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, সোনার তুলনায় রূপাও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে ভালো মুনাফা দিয়েছে।

ভারতে উৎসবের মরসুম যেমন রাখী বন্ধন, গণেশ চতুর্থী, নবরাত্রি, দশেরা এবং দীপাবলির মতো পার্বণে সোনা-রূপার চাহিদা ঐতিহ্যগতভাবে বাড়ে। এই কারণে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন যে, আগামী দুই মাসে উভয় ধাতুর দামেই আরও বৃদ্ধি দেখা যাবে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি ডলার এবং সুদের হারে বেশি পরিবর্তন না হয়, তবে এই ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের সোনার উপর বাড়ছে আস্থা

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা অস্থির শেয়ার বাজার এবং মুদ্রাস্ফীতি থেকে বাঁচতে সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন। এই কারণে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ইটিএফ-এর পক্ষ থেকেও সোনার কেনাকাটা বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

আজকাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিজিটাল সোনার চলনও বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ফিজিক্যাল সোনার পরিবর্তে গোল্ড বন্ডস, ইটিএফ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সোনায় বিনিয়োগ করছেন। এতে সোনার প্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং এর ট্রেডিংও দ্রুত হয়েছে।

Leave a comment