গোবর্ধন পূজা উৎসব দেশজুড়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে 22 অক্টোবর 2025 তারিখে পালিত হবে। এই দিনে গরুর গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের রূপ তৈরি করে পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এটি করলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি এবং ইতিবাচক শক্তি আসে। দেবতার মুখ পশ্চিম দিকে রাখা শুভ বলে মনে করা হয়।
গোবর্ধন পূজা 2025: দীপাবলির পরের দিন, অর্থাৎ 22 অক্টোবর 2025 তারিখে, দেশজুড়ে গোবর্ধন পূজা উৎসব জাঁকজমকের সাথে পালিত হবে। এই উপলক্ষে ভক্তরা তাদের বাড়ি এবং উঠানে গরুর গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের রূপ তৈরি করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন। এই ঐতিহ্য মথুরা এবং ব্রজ অঞ্চলের সাথে জড়িত, যেখানে এটি প্রকৃতি এবং পশুপালনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতীক হিসাবে উদযাপিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গোবর্ধন পূজা করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি, শান্তি এবং সৌভাগ্য আসে।
গোবর্ধন পূজার গুরুত্ব
দীপাবলির পরের দিন দেশজুড়ে গোবর্ধন পূজা উৎসব শ্রদ্ধা ও উৎসাহের সাথে পালিত হয়। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক গোবর্ধন পর্বত উত্তোলনের স্মৃতিতে উদযাপিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বত তৈরি করে তার পূজা করলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য আসে। ভগবান কৃষ্ণ এই উৎসবের মাধ্যমে প্রকৃতি এবং পশুপালনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন, তাই আজও গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে লোকেরা গরুর গোবর দিয়ে গোবর্ধন রূপ তৈরি করে পূজা করেন।
এই বছর গোবর্ধন পূজার পবিত্র উৎসব 22 অক্টোবর 2025, বুধবার পালিত হচ্ছে। এই দিনে লোকেরা সকাল থেকেই তাদের বাড়ি এবং উঠান সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং শুভ মুহূর্তে গোবর্ধন ভগবানের যথাযথ পূজা করেন।
গোবর দিয়ে গোবর্ধন তৈরির ঐতিহ্য
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গোবর্ধন পূজার দিনে গরুর গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের রূপ তৈরি করা হয়। এই আকৃতিকে একজন শুয়ে থাকা পুরুষের রূপ দেওয়া হয়, যাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক বলে মনে করা হয়। ঐতিহ্য অনুসারে, গোবর্ধন জির নাভিতে মাটির একটি ছোট প্রদীপ রাখা হয়। এই প্রদীপে দুধ, দই, গঙ্গা জল, মধু এবং বাতাসা দিয়ে পূজা করা হয়। পরে এটি প্রসাদ হিসাবে পরিবারের সকল সদস্য এবং ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
গোবর্ধন পূজায় গোবরের ব্যবহার কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুভই নয়, এটি পরিবেশ বান্ধবও। গরুর গোবর পবিত্র বলে বিবেচিত হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি ঘরের পরিবেশকে শুদ্ধ করে।
বাড়িতে গোবর্ধন তৈরির পদ্ধতি
আপনিও যদি এইবার বাড়িতে গোবর দিয়ে গোবর্ধন পর্বত তৈরি করতে চান, তবে নিচে দেওয়া সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- তাজা গরুর গোবর
- তুলসী পাতা
- শুকনো ঘুটে
- প্রদীপ (মাটির প্রদীপ)
- হলুদ এবং কুমকুম
- সামান্য মাটি
- ফুল এবং ফুলের মালা
- কাঠের প্লেট বা চৌকা
পদ্ধতি ধাপে ধাপে
- স্থানের শুদ্ধি: প্রথমে যেখানে গোবর্ধন তৈরি করতে হবে, সেই স্থানটি পরিষ্কার করুন এবং গঙ্গা জল বা পবিত্র জল দিয়ে শুদ্ধ করুন। এই প্রক্রিয়া স্থানটিকে পূজার উপযুক্ত করে তোলে।
- গোবরের আকার দিন: গরুর তাজা গোবর মিশিয়ে একটি বড় স্তূপ তৈরি করুন এবং এটিকে পাহাড়ের মতো আকার দিন। এটি হবে গোবর্ধন পর্বতের প্রধান রূপ।
- আকৃতি তৈরি করুন: একটি কাঠের কাঠি বা পাতলা ডন্ডার সাহায্যে সেই কাঠামোর উপর চোখ, নাক এবং মুখের চিহ্ন তৈরি করুন যাতে এটি একটি শুয়ে থাকা পুরুষের আকৃতির মতো দেখায়।
- শুকোতে দিন এবং সাজান: যখন গোবর কিছুটা শুকিয়ে যাবে, তখন তার উপর কাপড় এবং মুকুট পরান। কিছু লোক রঙিন কাপড় বা পাতা দিয়েও সাজসজ্জা করেন।
- সাজসজ্জা এবং প্রতীক: গোবর দিয়ে ছোট ছোট গোলা তৈরি করে গরু, বাছুর, গাছ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রতীকের আকৃতি তৈরি করুন। এগুলোকে গোবর্ধন পর্বতের আশেপাশে রাখুন।
- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমা স্থাপন করুন: গোবর্ধন পর্বতের মাঝখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি ছোট প্রতিমা স্থাপন করুন।
- সাজসজ্জা সম্পন্ন করুন: ফুল, মালা, খই, বাতাসা, হলুদ এবং কুমকুম দিয়ে সম্পূর্ণ সাজসজ্জা করুন। এই সময় মহিলারা ঐতিহ্যবাহী গান গান এবং শিশুরাও সাজসজ্জায় অংশ নেয়।
- তিলক এবং দীপদান: গোবর্ধন ভগবানের কপালে সাদা বা হলুদ রঙের তিলক লাগান। তারপর তাঁর নাভিতে মাটির প্রদীপ রাখুন এবং তাতে দুধ, দই, গঙ্গা জল, মধু এবং বাতাসা দিন। এই প্রদীপই পূজার প্রধান অংশ হয়।
- পূজন এবং অর্পণ: প্রদীপ জ্বালিয়ে গোবর্ধন ভগবানকে ফুল, মিষ্টি, অন্নকূট এবং অন্যান্য ব্যঞ্জন নিবেদন করুন। পূজার পর আরতি করুন এবং প্রসাদ সকলের মধ্যে বিতরণ করুন।
গোবর্ধন পূজায় দিকের গুরুত্ব
গোবর্ধন পূজায় দিকের বিশেষ গুরুত্ব বলা হয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গোবর্ধন ভগবানের আকৃতির মুখ পশ্চিম দিকে হওয়া উচিত।
এমনটি করলে পূজার প্রভাব শুভ বলে মনে করা হয় এবং ঘরে ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে। পশ্চিম দিককে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিকের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাই মুখ সেই দিকে রাখার ঐতিহ্য রয়েছে।
গোবর্ধন পূজায় অন্নকূটের গুরুত্ব
গোবর্ধন পূজার দিনে অন্নকূটের আয়োজনও করা হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের ব্যঞ্জন তৈরি করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ নিবেদন করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এতে চাল, ডাল, সবজি, মিষ্টি এবং মাখন অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই ভোগ অত্যন্ত প্রিয়। পূজার পর এই অন্নকূটই প্রসাদ হিসাবে সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
গোবর্ধন পূজা সম্পর্কিত বিশ্বাস
শ্রীমদ্ভগবদ্ পুরাণ অনুসারে, যখন ভগবান কৃষ্ণ দেখলেন যে লোকেরা ইন্দ্র দেবের পূজা করছে, তখন তিনি তাদের বোঝালেন যে বৃষ্টি এবং সমৃদ্ধি গোবর্ধন পর্বতের কৃপায় আসে। লোকেরা ইন্দ্রের পূজা ছেড়ে গোবর্ধন পর্বতের পূজা শুরু করল, যার ফলে ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হয়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু করলেন। তখন ভগবান কৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে মানুষ এবং পশুপালকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করেছিলেন।
এই ঘটনার স্মৃতিতে প্রতি বছর গোবর্ধন পূজার আয়োজন করা হয়, যাতে প্রকৃতি এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়।
পূজার সঠিক সময় এবং শুভ মুহূর্ত
জ্যোতিষাচার্যদের মতে, এই বছর গোবর্ধন পূজা 22 অক্টোবর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত করা হবে। যদিও সঠিক মুহূর্ত স্থান এবং পঞ্জিকা অনুসারে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত সকাল 6:30 থেকে 10:00 টা পর্যন্ত পূজার শুভ সময় বলে মনে করা হয়।