অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের (Nirmala Sitharaman) নেতৃত্বে জিএসটি কাউন্সিলে (GST Council) কর সংস্কার করে দুটি স্ল্যাব (slab) করা হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor) এটিকে ন্যায্য বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, কংগ্রেস দীর্ঘকাল ধরেই এই দাবি করে আসছিল এবং এটি সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে।
জিএসটি সংস্কার: ভারতে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি (GST) চালু হওয়ার বহু বছর হয়ে গেছে। প্রথমদিকে সরকার কর সংগ্রহ সহজ করা এবং সারা দেশে একটি অভিন্ন ব্যবস্থা আনার দাবি করেছিল। কিন্তু চারটি ভিন্ন কর স্ল্যাব থাকার কারণে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের প্রায়শই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের (Nirmala Sitharaman) নেতৃত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন চারটি স্ল্যাবের পরিবর্তে মাত্র দুটি স্ল্যাব থাকবে। এই সিদ্ধান্ত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলেছে।
এখন মাত্র দুটি স্ল্যাব
পূর্বে জিএসটি ব্যবস্থায় ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ স্ল্যাব ছিল। অনেক পণ্য ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার ফলে কর গণনা এবং গ্রাহকদের উপর প্রভাব জটিল হয়ে যেত। নতুন সংস্কারের পর এখন মাত্র দুটি স্ল্যাব থাকবে – ৫% এবং ১৮%। অর্থাৎ, কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর কম কর লাগবে এবং বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবার উপর ১৮% কর প্রযোজ্য হবে।
শশী থারুরের মন্তব্য
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (Shashi Tharoor) এই সংস্কারের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই পরিবর্তনটি আরও ন্যায়সঙ্গত (fair) এবং সাধারণ মানুষের জন্য উপকারী হবে।
থারুর বলেছেন-
"কংগ্রেস পার্টি বহু বছর ধরে এই একই দাবি করে আসছিল। আমাদের নেতারা ক্রমাগত বলছিলেন যে চারটি হার রাখা না ব্যবহারিক, না ন্যায়সঙ্গত। এখন যেহেতু মাত্র দুটি স্ল্যাব রয়েছে, তাই এই ব্যবস্থাটি সহজ এবং স্বচ্ছ হবে।"
তিনি আরও বলেন যে দীর্ঘকাল ধরে কংগ্রেস পার্টির অবস্থান ছিল যে করের হার হয় দুটি হওয়া উচিত অথবা একটি আদর্শ স্ল্যাব থাকা উচিত। এতে মানুষের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না এবং কর কাঠামোও অনেক সহজ হবে।
চারটি হারের সমস্যা, কেন ছিল সমস্যা
শশী থারুর পুরানো ব্যবস্থার উপরও প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর মতে, চারটি হার মানুষকে হয়রানি করত। এতে বিভ্রান্তি বাড়ত এবং ব্যবসায়ীরাও বুঝতে পারতেন না কোন পণ্যের উপর কত কর লাগবে।
অনেক সময় একই ধরণের জিনিস ভিন্ন ভিন্ন করের আওতায় আসত। এতে শুধু ভোক্তাই নয়, ছোট দোকানদার এবং ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়তেন। থারুরের মতে, এখন এই সমস্যা দূর হবে এবং ব্যবস্থা আরও ন্যায়সঙ্গত (equitable) হবে।
সাধারণ মানুষ কীভাবে স্বস্তি পাবে
নতুন সংস্কারের সবচেয়ে বড় সুবিধা সাধারণ মানুষ পেতে চলেছে। এখন গ্রাহকদের বুঝতে সুবিধা হবে যে তাদের পণ্য বা পরিষেবার উপর কত কর লাগবে। ৫% স্ল্যাবে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস অন্তর্ভুক্ত। যেমন – শস্য, ওষুধ এবং কিছু দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী। অন্যদিকে, ১৮% স্ল্যাবে বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত। এটি করদাতাদের জন্য একটি সহজ ব্যবস্থা তৈরি করবে এবং কর ফাঁকির সম্ভাবনাও কমবে।
সরকারের উদ্দেশ্য কী
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কাউন্সিলের বৈঠকের পর বলেছেন যে এই পদক্ষেপটি জনগণকে স্বস্তি দিতে এবং ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য নেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য হল কর ব্যবস্থা এতটাই সহজ করা যাতে মানুষকে কোনো বিশেষজ্ঞের (expert) সাহায্য নিতে না হয়। সরকারের মতে, এই সংস্কারের ফলে পরিপালনের (compliance) বোঝা কমবে এবং কর রাজস্বের উপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কংগ্রেসের অবস্থান
কংগ্রেস পার্টি দীর্ঘকাল ধরে বলছিল যে জিএসটির কাঠামো খুব জটিল। পার্টির নেতাদের মতে, 'এক রাষ্ট্র, এক কর' (One Nation, One Tax) এর প্রতিশ্রুতি তখনই পূরণ বলে মনে করা যেতে পারে যখন জিএসটির হার সরল এবং কম হবে। শশী থারুরের মন্তব্য এই নীতিকেই শক্তিশালী করে। তিনি পুনরায় বলেছেন যে যখন হার বেশি থাকে, তখন তা মানুষের প্রতি অবিচার (injustice)। এখন সংস্কারের মাধ্যমে একটি উন্নত ব্যবস্থা সামনে আসবে।