OPEC+ তেল উৎপাদন বাড়ালেও ভারতের স্বস্তির সম্ভাবনা কম: কেন?

OPEC+ তেল উৎপাদন বাড়ালেও ভারতের স্বস্তির সম্ভাবনা কম: কেন?

OPEC+ দেশগুলি অক্টোবর থেকে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু ভারত এর সুবিধা পাবে না। উৎপাদন বৃদ্ধি বা দাম কমলেও দুর্বল রুপি এবং উচ্চ আমদানি নির্ভরতার কারণে ভারত স্বস্তি পাবে না। দেশটি ২০২৩-২৪ সালে ২৩২.৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

তেল উৎপাদন: বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ OPEC+ অক্টোবর থেকে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন প্রতিদিন ১৩৭,০০০ ব্যারেল বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, ভারতের জন্য এর তেমন কোনো সুবিধা হবে না কারণ বিশ্বব্যাপী চাহিদার হ্রাস এবং দুর্বল রুপি এর প্রভাব কমিয়ে দেবে। ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং ২০২৩-২৪ সালে এটি ২৩২.৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা দেশের আমদানি নির্ভরতা ৮৭.৭% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দামের ওঠানামা ভারতের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

OPEC+ এর সিদ্ধান্ত এবং উৎপাদনের হার

OPEC+ এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি, যার মধ্যে সৌদি আরব, রাশিয়া এবং অন্যান্য সহযোগী দেশগুলি রয়েছে, তারা অক্টোবর থেকে তেল উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে। এই আটটি দেশ প্রতিদিন ১৩৭,০০০ ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। এই বৃদ্ধি পূর্ববর্তী মাসগুলির তুলনায় অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, সেপ্টেম্বর এবং আগস্টে এই বৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫৫৫,০০০ ব্যারেল প্রতিদিন, যেখানে জুলাই এবং জুনে ৪১১,০০০ ব্যারেল প্রতিদিন বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছিল।

OPEC+ এর এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হল তেল বাজারকে সমর্থন করা এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদার হ্রাসকে ভারসাম্যপূর্ণ করা। সৌদি আরব এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তার বাজার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। উৎপাদন বৃদ্ধির এই পদক্ষেপ এপ্রিল মাস থেকে চলমান বৃদ্ধির একটি নতুন অংশ, কিন্তু শীতকালে তেলের আধিক্যের সম্ভাবনার মধ্যে এই পদক্ষেপকে আশ্চর্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত কেন সুবিধা পাবে না

যদিও উৎপাদন বৃদ্ধি সাধারণত তেলের দাম কমাতে পারে, তবে এবার ভারত বেশি স্বস্তি পাবে বলে আশা করা যায় না। এর প্রধান কারণ হল ভারতীয় রুপি, যা মার্কিন ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। রুপি ৮৮ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম কমলেও আমদানিকারকরা তেমন কোনো বড় স্বস্তি পাবে না।

যদি উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও তেলের দাম স্থিতিশীল থাকে বা বৃদ্ধি পায়, তবে এটি ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে কারণ দেশটি বেশিরভাগ তেলের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে। অর্থাৎ, তেল সস্তা হোক বা দামি, রুপি দুর্বলতার কারণে ভারতের অর্থনীতি প্রকৃত লাভ পাবে না।

বিশ্বব্যাপী চাহিদা এবং বাজারের অস্থিরতা

OPEC+ এর উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল বিশ্বব্যাপী চাহিদার হ্রাসকে ভারসাম্যপূর্ণ করা। যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তবে তেলের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে, উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে দাম কমও হতে পারে। উভয় পরিস্থিতিতেই ভারত কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের শক্তিশালী হওয়ার কারণে তেলের দামের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে। ভারত তেল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং পরিশোধন খরচে প্রভাব দেখতে পারে।

ভারতের তেল আমদানি

ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। দেশটির বেশিরভাগ তেলের চাহিদা উপসাগরীয় দেশ এবং রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে ভারত প্রায় ২৩২.৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

এই সময়ে ভারতের তেল আমদানির উপর নির্ভরতা ৮৭.৭ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মোট আমদানি বিল ছিল ১৩২.৪ বিলিয়ন ডলার। এই আমদানি নির্ভরতার কারণে আন্তর্জাতিক তেলের দামের পরিবর্তন সরাসরি ভারতের জ্বালানি বাজেট এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।

উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতের চ্যালেঞ্জ

OPEC+ দেশগুলির উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে, কিন্তু দামের ওঠানামা এবং রুপি দুর্বলতার কারণে ভারত স্বস্তি পাবে না। জ্বালানি মন্ত্রক এবং তেল সংস্থাগুলির জন্য আমদানি খরচ পরিচালনা করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে তার তেল মজুদ এবং ডিলারদের মাধ্যমে বাজারের অস্থিরতা মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়াও, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি নীতি এবং আমদানি কৌশলের প্রভাব আগামী মাসগুলিতে তেলের দাম এবং দেশীয় পেট্রোল-ডিজেল দরের উপর পড়বে।

Leave a comment