হরছট ব্রত ২০২৫: তারিখ, তাৎপর্য এবং পালনীয় নিয়ম

হরছট ব্রত ২০২৫: তারিখ, তাৎপর্য এবং পালনীয় নিয়ম

হরছট ব্রত ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ১৪ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে পালিত হবে। এই ব্রত বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দিনে তাঁরা সন্তানের দীর্ঘায়ু ও পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন। এই ব্রত ভগবান বলরামের পূজার সঙ্গে জড়িত।

হরছট ব্রত ২০২৫: হিন্দু ধর্মে ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হওয়া হরছট ব্রত মহিলাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই বছর এই ব্রত ১৪ই আগস্ট সকাল ৪:২৩ থেকে শুরু হয়ে পরের দিন রাত ২:০৮ পর্যন্ত থাকবে। হরছট ব্রত ভগবান কৃষ্ণের বড় ভাই বলরামের জন্মদিনে অনুষ্ঠিত হয়, যাঁকে হলধরও বলা হয়। মহিলারা এই দিনে সন্তানের দীর্ঘ জীবন, সুখ-সমৃদ্ধি এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্য উপবাস রাখেন।

হরছট ব্রত কবে এবং কীভাবে পালন করা হয়?

এই বছর হরছট ব্রত ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ১৪ই আগস্ট সকাল ৪:২৩ মিনিটে শুরু হবে এবং ১৫ই আগস্ট রাত ২:০৮ পর্যন্ত চলবে। এই ব্রত পুরো দিন নির্জলা থাকে, অর্থাৎ ব্রতী মহিলা এই দিনে খাদ্য ও জল গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। এই দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভগবান বলরামের পূজা করা হয় এবং তাঁর আরাধনায় সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখানো হয়।

ব্রতের শুরু ব্রহ্ম মুহূর্তে হয়, যা সকাল ৪:২৩ থেকে ৫:০৭ পর্যন্ত থাকে। এর পরে সকালের শুভ কাল যেমন অমৃত কাল (৬:৫০ থেকে ৮:২০) এবং অভিজিৎ মুহূর্ত (১১:৫৯ থেকে ১২:৫২)-এও পূজা-অর্চনা করা হয়। দুপুরের বিজয় মুহূর্ত (২:৩৭ থেকে ৩:৩০) এবং সন্ধ্যার গোধূলি মুহূর্ত (৭:০১ থেকে ৭:২৩)-ও ব্রতের জন্য বিশেষভাবে শুভ বলে মনে করা হয়।

মহিলাদের জন্য হরছট ব্রত কেন বিশেষ?

হরছট ব্রত মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দিনে তাঁরা তাঁদের পরিবারের, বিশেষত সন্তানের দীর্ঘ জীবন, স্বাস্থ্য এবং সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন। এই উৎসব ভগবান বলরামকে উৎসর্গীকৃত, যিনি কৃষি ও লাঙলের দেবতা হিসেবে পরিচিত। বিশ্বাস করা হয় যে তাঁর পূজার মাধ্যমে জীবনে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও সুখ আসে।

ঐতিহ্য অনুসারে, ব্রতী মহিলারা এই দিনে লাঙলের সঙ্গে জড়িত ভূমিতে পা রাখেন না এবং লাঙল দ্বারা উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য খান না। এই নিয়ম এই পর্বের বৈশিষ্ট্য, যা ভগবান বলরামের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এছাড়াও, এই দিনে গরুর দুধ ও দইও খাওয়া নিষেধ।

হরছট ব্রতের নিয়ম ও ঐতিহ্য

  • নিরাহার ও নির্জলা ব্রত: ব্রতী সম্পূর্ণরূপে খাদ্য ও জল থেকে বিরত থাকেন।
  • লাঙলের সঙ্গে জড়িত জমি থেকে परहेज: মহিলাদের এই দিনে লাঙলের সঙ্গে জড়িত ভূমিতে পা রাখা উচিত নয়, যা ভগবান বলরামের পূজার বিশেষ অঙ্গ।
  • দুধ ও দই ত্যাগ: গরুর দুধ ও দই খাওয়া নিষেধ, কারণ এগুলো লাঙলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত পদার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • পূজা ও ভজন: সারাদিন ভগবান বলরামের পূজা, ভজন ও কীর্তনে মগ্ন থাকা উচিত।
  • মনের শুদ্ধি ও সংযম: এই ব্রত শুধু শরীরের তপস্যা নয়, বরং মনের শুদ্ধিরও বার্তা দেয়।

হরছট ব্রতের ধর্মীয় ও সামাজিক তাৎপর্য

হরছট ব্রত কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এটি মহিলাদের সংযম, ধৈর্য ও শ্রদ্ধার পরীক্ষা নেয়। এই দিনে পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে ব্রতী মহিলাদের সহযোগিতা করেন, যা পরিবারে সম্প্রীতি ও ঐক্য বৃদ্ধি করে।

ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষের ষষ্ঠী তিথির নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এই দিনটি ভগবান বলরামের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। বলরাম, যাঁকে হলধরও বলা হয়, কৃষির দেবতা এবং তাঁর লাঙল জীবনে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতীক।

 

Leave a comment